যমজ শিশু এবং মায়ের সঙ্গে ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।
সিজ়ার ছাড়াই যমজ সন্তানের জন্ম দিলেন এক প্রসূতি। কোনও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নয়, একটি গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা এই কঠিন কাজটি করে ফেললেন। ঘটনাস্থল উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মা এবং দুই শিশু সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন।
ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৮০। হাসপাতালে কোনও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। সিজ়ার করানোর মতো পরিকাঠামোও নেই। তার পরও গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে আসা এক প্রসূতিকে ফেরাল না হাসপাতাল। কোনও অস্ত্রোপচার ছাড়াই বিপন্মুক্ত প্রসব করিয়ে প্রশংসা কুড়োলেন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। ‘রেফার-রোগের’ জন্য যখন জেলার জেলার সরকারি হাসপাতাল সমালোচিত হয়, সেখানে অনন্য ভূমিকা পালন করল এই গ্রামীণ হাসপাতাল।
শুক্রবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে যমজ শিশুর জন্ম দেন ধূপগুড়ি ঘোষপাড়ার বাসিন্দা মানসী ঘোষ আচার্য নামে এক যুবতী। এর আগে একটি ৮ বছর বয়সি সন্তান আছে তাঁর। প্রথম সন্তান সিজ়ার করে হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবে এ বারেও ‘নর্মাল ডেলিভারি’ বিপজ্জনক হয়ে থাকে বলে জানাচ্ছে খোদ স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য। তবে সন্তানসম্ভবা মানসীর শারীরিক অবস্থা দেখে তাঁকে কোথাও স্থানান্তরের ঝুঁকি নেননি ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এবং সফল ভাবে প্রসূতির সন্তান প্রসব করান চিকিৎসকেরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ধূপগুড়ি থেকে জেলা হাসপাতালের দূরত্বে প্রায় ৩৯ কিলোমিটার। গ্রামীণ হাসপাতালে তেমন ব্যবস্থা না থাকলেও চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের উদ্যোগে এখানেই যমজ সন্তান প্রসব করিয়েছেন।
যমজ সন্তানের মা মানসী বলেন, ‘‘আমি খুব খুশি। আমার দুই সন্তান এবং আমি সুস্থ রয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এখানে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকা সত্ত্বেও ওঁরা বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে আমায় ভর্তি নিয়েছিলেন।’’
হাসপাতালের কর্তব্যরক্ত চিকিৎসক প্রণয় দাস বলেন, ‘‘সম্ভবত এই প্রথম যমজ বাচ্চা প্রসব হল ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে। জটিল কোনও অবস্থা তৈরি হলে আমরা জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল ‘রেফার’ করি। কিন্তু ওই রোগীর যা অবস্থা ছিল তাঁকে জলপাইগুড়ি রেফার করা সম্ভব ছিল না। তাই আমরা বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে সাহস করে এখানেই ‘নর্মাল ডেলিভারি’ করিয়েছি। এবং আমরা সফল।’’ ধূপগুড়ি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অঙ্কুর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যে হেতু রোগিণীর আগের সন্তান সিজ়ারে হয়েছিল, তাই দ্বিতীয় বার একটু চাপ থাকে। ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে আধুনিক সরঞ্জাম এমনকি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞও নেই। তবুও এমন কাজ কুর্নিশযোগ্য।’’
এই প্রসঙ্গে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন চিকিৎসক, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবন তো বার বার বলেছে, ‘রেফার করবেন না’। সেখান থেকে এমন একটি কেসে চিকিৎসকেরা যে অন্য কোনও হাসপাতালে স্থানান্তর করেননি, সেটা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য।’’