সাজছে কেরির স্মৃতি বিজড়িত নীলকুঠি

মালদহ শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বামনগোলা ব্লকের মদনাবতী। রাজ্য সড়ক থেকে লালমাটির রাস্তা ধরে পৌঁছতে হয় ওই গ্রামে। অখ্যাত এই গ্রামটিই ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৪৪
Share:

সংস্কার: নীলকুঠির হাল ফেরাতে একশো দিনের কাজ। নিজস্ব চিত্র

ভোল বদলাতে চলেছে উইলিয়াম কেরির স্মৃতি বিজড়িত নীলকুঠির। প্রশাসনের উদ্যোগে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ঐতিহাসিক নীলকুঠিটি সাজার কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, জানুয়ারিতেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।

Advertisement

প্রশাসনের এই উদ্যোগে খুশি মালদহ জেলার বামনগোলা ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম মদনাবতীর বাসিন্দারা, জেলার ইতিহাসবিদেরাও। তাঁদের আশা, নীলকুঠিটি সাজিয়ে তোলার হলে ভিড় বাড়বে পর্যটকদের। তাতে বদলে যেতে পারে গ্রামের পরিবেশও। মালদহের বিশিষ্ট সাহিত্যিক পুষ্পজিৎ রায় বলেন, “সুন্দর ভাবে নীলকুঠিটি সেজে উঠলে পর্যটকদের ভ্রমণের ঠিকানা হতে পারে মদনাবতী গ্রাম।”

মালদহ শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বামনগোলা ব্লকের মদনাবতী। রাজ্য সড়ক থেকে লালমাটির রাস্তা ধরে পৌঁছতে হয় ওই গ্রামে। অখ্যাত এই গ্রামটিই ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়। সালটা ১৭৯৪। নীলকুঠির ম্যানেজার হিসেবে মদনাবতী গ্রামে সপরিবারে হাজির হয়েছিলেন উইলিয়াম কেরি। তিনি মদনাবতী গ্রামেই কাটিয়েছিলেন পাঁচ বছর। ১৭৯৯ সালে মদনাবতী গ্রাম ছেড়ে তিনি চলে যান শ্রীরামপুরে। তবে রেখে গিয়েছিলেন অনেক স্মৃতি। আজও তাঁর স্মৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেই গ্রামে।

Advertisement

ইতিহাসবিদদের দাবি, তিনি শুধু নীলকুঠির ম্যানেজারই ছিলেন না। তিনি বাংলা নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎও। বাংলা গদ্যের সূচনা এই গ্রাম থেকেই করেছিলেন
উইলিয়াম কেরি।

তিনি নিজেই টিন কেটে তৈরি করেছিলেন বাংলা হরফের ছাপাখানা। গ্রাম বাংলার মানুষকে শিক্ষার আলোয় আনতে গড়ে তুলেছিলেন স্কুল। গ্রামের গরিব ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার সঙ্গেই দুপুরের খাবার ও পোশাকও দিয়েছিলেন তিনি। গ্রামের সাধারণ মানুষদের জন্য গড়ে তুলেছিলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্র। শিক্ষা, স্বাস্থ্যের পাশাপাশি চাষেও উন্নতি ঘটাতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে ১৭৯৬ সালের ১১ অক্টোবর সংক্রমণ ঘটিত রোগে মৃত্যু হয় উইলিয়াম কেরির পাঁচ বছরের ছেলে পিটারের। গ্রামেই মেঘডুমরা দিঘির ধারে প্রিয় পুত্রকে সমাধিস্থ করেছিলেন তিনি। আজও দিঘির ধারে রয়েছে সেই সমাধি।

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছিল এত স্মৃতি বিজড়িত নীলকুঠিটিই। নষ্ট হয়ে গিয়েছে মুদ্রণযন্ত্রটিও। নীলকুঠির ভগ্নাবশেষ আগাছায় ঢেকে গিয়েছিল। তাই ক্ষুব্ধ ছিলেন গ্রামের বাসিন্দারাও। অবশেষে প্রশাসনের তরফে ঐতিহাসিক স্থানটি ঢেলে সাজাতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা ব্যয়ে সাজানো হবে নীলকুঠিটি।

বামনগোলা ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, “সপ্তাহ খানেক ধরে কাজটি শুরু হয়েছে। পাঁচটি পর্যায়ে আমরা কাজ করব। ইতিমধ্যে প্রথম পর্যায়ে কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ সরকার, সুশান্ত দাসেরা বলেন, “এখন পিকনিকের মরসুম চলছে। প্রশাসন এখনই সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়ায় এ বারে ভালো ভিড় জমবে গ্রামে।’’ গ্রামের পরিবেশও বদলে যাবে বলে আশাবাদী তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement