ইসলামপুরের দাড়িভিট স্কুল।—নিজস্ব চিত্র।
দাড়িভিটে রাজ্যের শাসক দল বেকায়দায় পড়েছে বলে কথা উঠেছে তৃণমূলের অন্দরেই। কেন দলের নেতারা এলাকার মানুষের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করতে পারছেন না, এই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য নেতৃত্বও। খোদ মন্ত্রী গোলাম রব্বানিই কেন স্কুলে ঢুকতে পারছেন না, সে প্রশ্ন উঠেছে। রব্বানি অবশ্য বলেন, ‘‘বিষয়টি ইসলামপুরের বিধায়ক দেখছেন। আমি কিছু বলতে পারব না।’’ ইসলামপুরের বিধায়ক কানাইয়ালাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘আমাদের দলের নেতারা পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। বিজেপি নোংরা রাজনীতি করছে। আমরাও রাজনৈতিক ভাবে এর মোকাবিলা করব।’’
কিন্তু জটিলতা মেটাতে মন্ত্রী ও বিধায়কের কাছে কেন সদুত্তর নেই, সেই প্রশ্নও উঠেছে। দাড়িভিট গ্রাম সংসদে শাসক দলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য রয়েছেন। যে পণ্ডিতপোতা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে ওই এলাকা, সেখানে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূলই। তা সত্ত্বেও রাশ কী করে বিজেপির হাতে গেল, তা নিয়ে দলের মধ্যে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।
এমনকি এর পিছনে দলীয় কোন্দলের প্রভাব থাকার বিষয়টি যেমন সামনে এসেছে, তেমনই কেন আন্দোলনের আঁচ আগাম বুঝতে পারেননি স্থানীয় নেতৃত্ব, সেই প্রশ্নের মুখে বিধায়ক-মন্ত্রীরাও।
গত ২০ সেপ্টেম্বর দাড়িভিট হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে। গুলিতে নিহত হন দুই কলেজ পড়ুয়া। একজন স্কুলের ছাত্র এবং এক পুলিশকর্মী জখম হন। বিজেপির ঘটনাকে জাতীয় স্তরে নিয়ে গিয়েছে। সেখানে তৃণমূল নেতারা এলাকায় ঢুকে বাসিন্দাদের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে পারছেন না বলে দলেরই একাংশের অভিযোগ।
তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের কয়েক জনের কথায়, বিজেপি নিহতদেরই পরিবারকে সব সময় ঘিরে থাকছে। একটু কথা বলার মতো জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। দাঁতে দাঁত কামড়ে বিজেপি পড়ে রয়েছে শুরু থেকেই। তার জন্য স্থানীয় বিধায়ক এবং মন্ত্রীকে দায়ী করেছেন অনেকে। ঘটনার পরেই তাঁরা বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারলে এমনটা হতো না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রথমে তারা বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব দেননি বলেই দলের একাংশের অভিযোগ।
স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে রব্বানির প্রভাব খাটানোর অভিযোগও তুলেছেন বিরোধী দলের লোকেরা। দলেরই একটি সুত্রে খবর, পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী গত ২৬ সেপ্টেম্বর বন্ধের দিন নিহত দুই পরিবারের সঙ্গে দেখা করে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং এক জনের করে চাকরি দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব জানানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন ইসলামপুরের বিধায়ককে। বিধায়ক না-গিয়ে সেই প্রস্তাব নিয়ে বিধায়কের এক প্রতিনিধি দল নিহতদের বাড়িতে গিয়েছিল। তবে ততক্ষণে নিহত রাজেশ এবং তাপসের বাবার নীলকমল সরকার এবং বাদল বর্মণকে নিয়ে দিল্লি চলে গিয়েছে বিজেপি নেতারা। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, সরকারি প্রস্তাব নিহতদের পরিবারের লোকজন তা প্রত্যাখ্যান করেন।
বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশের গুলিতে দু’জন নিহত হয়েছে। অথচ পুলিসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। মানুষ তাই তাঁদের বিশ্বাস করতে পারছে না।’’