TMC Leader Shot Dead

মালদহে আততায়ীর গুলিতে নিহত ‘সরকার’ দুলাল কে? যাঁর জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ স্বয়ং পুলিশমন্ত্রীর!

মমতা উত্তরবঙ্গ সফরে গেলে সঙ্গী হতেন মালদহের দুই নেতা কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এবং দুলাল সরকার। সেই দুলাল দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হওয়ার পর পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:০৯
Share:

দুলালচন্দ্র সরকার ওরফে বাবলা। —ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মালদহে গেলেই তাঁর জন্য রান্না করে নিয়ে যেতেন দুলাল সরকার এবং তাঁর স্ত্রী চৈতালি। আর মমতার উত্তরবঙ্গ সফরে সঙ্গী হতেন মালদহের দুই নেতা কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এবং দুলাল। দলের ‘দুর্দিনে’ যখন বহু নেতা তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরে গিয়েছেন, তখনও ‘দিদির হাত’ ছাড়েননি দুলাল। দলের অন্দরে কিছু অনুযোগ করলেও প্রকাশ্যে কোনও অভিযোগ করতে শোনা যায়নি তাঁকে।

Advertisement

সেই দুলাল শুক্রবার দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হওয়ার পর পুলিশের বিরুদ্ধেই গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা। আর সেই কৃষ্ণেন্দু (দুলাল যখন ইংরেজবাজারের উপ পুরপ্রধান, তখন পুরপ্রধান ছিলেন কৃষ্ণেন্দু) বলছেন, “ও খুব জনপ্রিয় ছিল। মনে হয় না, এটা রাজনৈতিক কারণে খুন।”

দুলালের রাজনৈতিক পরিচয় হল, তিনি ইংরেজবাজার পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং জেলা তৃণমূল সহ-সভাপতি। প্রত্যাশিত ভাবেই মালদহের বাইরের রাজনীতিতে দুলালের (যিনি ‘বাবলা’ ডাকনামেই বেশি পরিচিত) তেমন কোনও পরিচিতি ছিল না। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য তাঁকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ করে দিয়েছে। কারণ, তাঁর খুনের ঘটনায় নিজের অধীন পুলিশবাহিনীর একাংশকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।

Advertisement

মালদহের জেলা রাজনীতি সম্পর্কে অভিজ্ঞদের বক্তব্য, জেলা সভাপতি দুলালের ‘রাজনৈতিক প্রভাব’ আগের মতো ছিল না। তবে ইংরেজবাজার পুরসভার ২০, ২১ এবং ২২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রভাব ধরে রেখেছিলেন তিনি। অন্য অনেক রাজনীতিকের মতোই দুলালের বিরুদ্ধেও ‘দাদাগিরি’ করার ছুটকোছাটকা অভিযোগ রয়েছে। তার অধিকাংশ নতুন ফ্ল্যাট তৈরির সময় ‘দক্ষিণা’ চাওয়া এবং স্থানীয় ঝামেলায় অনাবশ্যক নাক গলানো। তবে অধিকাংশ অভিযোগই থানা পর্যন্ত যেত না। তাই খাতায়কলমে দুলালের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজে জড়়ানোর খতিয়ান তেমন নেই। দুলালের ঘনিষ্ঠের বক্তব্য, উত্তরোত্তর তাঁর ব্যবসায়িক শ্রীবৃদ্ধি ঘটছিল। রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই রেল অনুমোদিত ঠিকাদারি সংস্থা ছিল দুলালের। পরে তিনি প্লাইউড, প্লাস্টিক এবং গদির ব্যবসাতেও নামেন। সম্প্রতি জমি-বাড়ির প্রোমোটিংয়েও ছিলেন। তাঁর কোনও ‘ব্যবসায়িক শত্রু’ ছিল কি না, তা খুঁজে দেখছে পুলিশ। প্রসঙ্গত, দুলালের বিরুদ্ধে এর আগে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। সে-ও ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সংক্রান্ত।

মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য উষ্মা প্রকাশের পরে দুলালকে খুনের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের এক জন ইংরেজবাজারেরই বাসিন্দা। অপর জন বিহারের বাসিন্দা। খুনের নেপথ্যে রাজনীতি না ব্যবসায়িক কারণ, তা-ই এখন খতিয়ে দেখছে মালদহ জেলা পুলিশ।

দুলালের পরিচিতদের দাবি, ইদানীং জেলার গোষ্ঠী রাজনীতিতে তিনি থাকতেন না। বরং সব গোষ্ঠীর সঙ্গেই তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। যদিও গত পুরনির্বাচনের সময় বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। সে বার ২২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দুলাল। আগে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি। যিনি একসময়ে দুলালের ব্যবসায়িক সঙ্গী এবং বন্ধু ছিলেন। কিন্তু সে বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ওয়ার্ড বদলে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে হেরে যান তৃণমূল প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ। দলের একাংশ অভিযোগ করেন, দুলালই ‘কলকাঠি নেড়ে’ প্রাক্তন বন্ধুকে হারিয়ে দিয়েছেন। দুলাল এবং নরেন্দ্রনাথের চাপানউতরে যখন জেলা রাজনীতি উত্তপ্ত, তখন মালদহের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন নরেন্দ্রনাথের পক্ষ নেন বলে দাবি দুলালের অনুগামীদের একাংশের। তাঁদের অভিযোগ, সাবিনার কথাতেই দুলালের পুলিশি নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়েছিল। যদিও সরকারি সূত্রের এর কোনও সমর্থন মেলেনি। তবে ঘটনাচক্রে, এই বিষয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি বলেন, “অবশ্যই পুলিশের গাফিলতিতে খুন হয়েছে। ওর উপর আগেও আক্রমণ হয়েছিল। আগে নিরাপত্তা পেত। পরে সেটা তুলে নেওয়া হয়।”

১৯৯৫ সাল থেকে একটানা পুরভোটে জয়ী দুলাল অবশ্য বিধানসভা ভোটে জিততে পারেননি। দু’বার মালদহ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে লড়ে হেরে যান। ইংরেজবাজার শহরেরই মহানন্দা পল্লিতে ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর। রয়েছেন পুত্র এবং স্ত্রী। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে ফ্ল্যাট থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বের প্লাইউড কারখানায় দাঁড়িয়েছিলেন দুলাল। তখনই মোটরবাইকে চেপে তাঁকে তাড়া করে কয়েক জন দুষ্কৃতী। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, প্রাণ বাঁচাতে প্লাইউড কারখানায় পড়িমড়ি করে ঢুকে পড়ছেন দুলাল। আর তাঁর দিকে বন্দুক তাক করে গুলি ছুড়ছে দুষ্কৃতীরা। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, একটি গুলি দুলালের মাথার কাছে লাগে। সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement