ফাইল চিত্র।
বগটুই কাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য জুড়ে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পরে গত এপ্রিল মাসের শেষ থেকে মালদহ জেলার কয়েকটি জায়গা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু তাতে জেলায় বোমা তৈরি বা আগ্নেয়াস্ত্রের কারবার থামানো যায়নি। শনিবার, গভীর রাতে মানিকচকের গোপালপুরের জেসারথটোলায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্য, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং সামনে পঞ্চায়েত ভোট থাকায় শাসক দলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরাই এ সব কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব এই বক্তব্য ভিত্তিহীন বলে অস্বীকার করেছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, মালদহ জেলায় কেন বোমা তৈরি বা আগ্নেয়াস্ত্রের কারবার থামানো যাচ্ছে না? এ সবের পিছনে কারা রয়েছে? কবে এ সব বন্ধ করতে পারবে প্রশাসন?
গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, বেশ কয়েক বছর ধরেই মালদহ জেলায় বোমা তৈরির রমরমা চলছে। জেলায় কালিয়াচকের মোজমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নারায়ণপুর, শ্রীরামপুর, আকন্দবারিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সাইলাপুর, কালিয়াচক ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁঠালবাড়ি, রাজনগর, বৈষ্ণবনগর থানার জৈনপুর, কুম্ভীরা, পারদেওনাপুর, মানিকচক ব্লকের বালুটোলা প্রভৃতি এলাকা সেই কারণে ‘কুখ্যাত’। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর পুলিশি তৎপরতা বেড়ে গেলে, এ সব এলাকা থেকে প্রচুর বোমা উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছিল। কালিয়াচক থানার গোলাপগঞ্জের গোপালনগরে ফেলা রাখা বোমাকে বল ভেবে খেলতে গিয়ে তা ফেটে পাঁচ শিশু, কিশোর গুরুতর আহত হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও যে বোমা তৈরির কারবার এই জেলায় বন্ধ হয়নি তা শনিবার রাতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বোঝা গেল।
জেসারথটোলা গ্রামের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, সেখানে বোমা তৈরির সময়ই বিস্ফোরণ হয়। আর তাতে তিন জন মারা যান ও বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়েছিল মানিকচকের এই গোপালপুর এলাকা। গুলি ও বোমা লড়াইয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন এক শিশু-সহ অনেকেই। দু’দিন আগেই এই গোপালপুরের বালুটোলা এলাকা থেকে তিনটি বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ-সহ তৈমুর আলি নামে একজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির দক্ষিণ মালদহ সাংগঠনিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌরচন্দ্র মণ্ডল অভিযোগ করেন, ‘‘এই জেলায় শাসক দলের নেতা, কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে রয়েছে। সে জন্য এবং সামনে পঞ্চায়েত ভোট থাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে শাসক দলের মদতপুষ্ট লোকজনেরাই বোমা তৈরি, আগ্নেয়াস্ত্রের বেআইনি কারবারে জড়িত। এনআইএ তদন্ত হলে সব সামনে আসবে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেবজ্যোতি সিংহর অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজকর্মের ভাগাভাগি নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব জেলা জুড়ে। আর তাঁরাই একে অপর গোষ্ঠীকে ভয় দেখাতে বেআইনি ভাবে বোমা তৈরি ও আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রাখছে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, ‘‘এ সব দুষ্কৃতীদের কাজ। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। বিরোধীরা ভিত্তিহীন অপপ্রচার করছেন।’’
পুলিশ সুপার প্রদীপ যাদব বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। জেলা জুড়ে লাগাতার অভিযান চালিয়ে প্রচুর বোমা ও বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের কাজ চলছে। সেই অভিযান চলবে।’’