বিধি উড়িয়ে: শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত পাইকারি মাছ বাজারে এ ভাবেই উপচে পড়েছে ভিড় । ছবি: স্বরূপ সরকার
‘আপনার কাছে স্যানিটাইজ়ার আছে?’ প্রশ্ন করতেই অবাক চোখে তাকালেন মাছ বিক্রেতা ননী বর্মণ। তাঁর মাস্কটিও ঠিকমতো পরা নেই। অন্য কোনও কোনও বিক্রেতাদেরও একই অবস্থা। বুধবার ফুলেশ্বরী বাজারের ছবি। অবশ্য কিছু কিছু বিক্রেতা ঠিকমতোই মাস্ক পরেছিলেন। তাঁদেরই একজন পকেট থেকে শিশি বের করে ননীকে দেখালেন স্যানিটাইজ়ার আসলে কী। কেবল ফুলেশ্বরী বাজারই নয়, সুভাষপল্লি বাজার এবং ঘোঘোমালি বাজারেও ছবিটা একই।
কেন ঠিকমতো পরছেন না মাস্ক? ওই তিনটি বাজারেই এক একজন ব্যবসায়ী এক একরকম কারণ বললেন। কিন্তু ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের একটি অংশ জানাচ্ছেন, বাজারগুলি থেকেই বেশি ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে প্রশাসনও। দু’দিন আগেই পর্যটনমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। কিন্তু বাজারগুলিতে ছবিটা বদলাচ্ছে না। বাজারের সরু গলিতে বাইক, স্কুটি দাঁড় করানো। দূরত্ববিধি উড়িয়ে গিজগিজে ভিড় হচ্ছে বাজারে। কেন এমন অবস্থা? বৃহত্তর শিলিগুড়ি খুচরো বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব রায় মুহুরি বলেন, ‘‘বড় বাজারগুলিতে সব করছি আমরা। কিন্তু ছোট বাজারগুলি এখনও কিছুটা উপেক্ষায় থাকছে। প্রশাসনের তরফে এগুলিতেও একটু সচেতনতা প্রচার এবং জীবাণুমুক্ত করার কাজ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে।’’
ভিড় নিয়ন্ত্রণে থাকছে না বলে ঘোঘোমালি বাজার ফের কিছুদিনের জন্য বন্ধ করার কথাবার্তা চলছে। এই বাজারে একবার করে পুলিশ আসে। কিন্তু তাও চলে বেআইন পার্কিং এবং ভিড়। ঘোঘোমালি বাজার মেন রোড ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তুফান সাহা বলেন, ‘‘বাজার জীবাণুমুক্ত করার কাজ করতে হবে প্রশাসনকে। আমরা ভিড় এবং ব্যবসায়ীদের সচেতনতা দেখব। প্রশাসন যা করবে আমরা সহযোগিতাই করব।’’ এই বাজারেও স্বাস্থ্যবিধি তথৈবচ। বেশিরভাগ মাছ ব্যবসায়ীর হাতে দস্তানা নেই। মাছের হাতে বার বার স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করতেও চান না অনেকেই। রবীন্দ্রনগর আনাজ বাজারেও একই ছবি। বাজারে দরদাম করতে, আনাজ বাছাই করতে এক অপরের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন অনেকেই। বেশিরভাগ আনাজ বিক্রেতার মাস্ক হয় কানের সঙ্গে ঝোলানো, নয়তো থুতনিতে নামানো। রবীন্দ্রনগর বাজারের এক ব্যবসায়ী অরিন্দম সাহা বলেন, ‘‘প্রথম প্রথম সব বাজারেই কাউন্সিলর, পুলিশের দেখা মিলত। একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব ছিল। কিন্তু করোনা নিয়ে অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর যেন সবই ঢিলেঢালা, নিয়ন্ত্রণহীন।’’ সুভাষপল্লি বাজারে মাঝেমধ্যে জীবাণুমুক্ত করার কাজ হচ্ছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। তবে মাস্ক ব্যবহারের সমস্যা রয়েছে এখানেও।
উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হচ্ছে, সিদ্ধান্ত হচ্ছে, প্রচার হচ্ছে। কিন্তু তা বাস্তবে ছোটবাজারগুলি পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে না বলেই অভিযোগ। তাতেই ঝুঁকির সম্ভাবনা বাড়ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের একাংশের। কবে সচেতনতা প্রচার হবে, কড়াকড়ি হবে? অপেক্ষায় সকলে।