—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
তামাক চাষ নিয়ে স্পষ্ট কোনও দিশা দেখা গেল না রাজ্য বাজেটে। সরকার সম্প্রতি তামাকের জায়গায় বিকল্প চাষে উৎসাহ দিতে শুরু করেছে। তার মধ্যে রয়েছে ভুট্টা, সর্ষে বা আলুর মতো ফসল। কিন্তু এর মধ্যে কোনও ফসলেই তামাকের মতো আয় নেই। এমন অবস্থায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে কোচবিহারের তামাক চাষিদের মধ্যে। তাঁদের বক্তব্য, তামাক চাষ বন্ধ করে দিলে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়বেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে কোনও দিশা দেখানো প্রয়োজন সরকারের। কোচবিহার জেলার উপ কৃষিঅধিকর্তা (প্রশাসন) গোপাল মান বলেন, ‘‘তামাক চাষের বদলে বিকল্প চাষে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।সরকারি নির্দেশে তা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বহু কৃষক তামাক ছেড়ে অন্য চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। এই অবস্থায় নতুন করে তামাক নিয়ে কোনও ভাবনা নেই।’’
কোচবিহারে একটি অর্থকরী ফসল তামাক। ওই চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে লক্ষ-লক্ষ মানুষ জড়িত। কোচবিহার জেলায় প্রায় এগারো হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। যার বেশির ভাগটাই দিনহাটা, সিতাই, শীতলখুচি ও মাথাভাঙায়। তামাক চাষিরা জানিয়েছেন, এক বিঘা তামাক চাষে দশ থেকে বারো হাজার টাকা খরচ রয়েছে। সেখানে এক বিঘা জমি থেকে কম পক্ষে দশ মণ তামাক উৎপাদন হয়, যা বাজারে অন্তত পঁচিশ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। অর্থাৎ তামাক চাষ করে এক বিঘা জমি থেকে বারো থেকে পনেরো হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। সিতাইয়ের তামাক চাষি রবীন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, ‘‘তামাক চাষ করে সংসার চলে আমাদের। এই অবস্থায় চাষ বন্ধ করে দিলে অথৈ জলে পড়তে হবে আমাদের। আমি দুই বিঘা জমিতে তামাকের বদলে সর্ষে চাষ করেছিলাম। সেখানে এক বিঘা জমি থেকে দুই হাজার টাকা লাভ হবে কি না, সন্দেহ আছে।’’
বামপন্থী কৃষক সংগঠন কৃষকসভার কোচবিহার জেলা যুগ্ম সম্পাদক আকিক হাসান বলেন, ‘‘তামাক কোচবিহার জেলার একটি অর্থকরী ফসল। এই ফসলের উপরে নির্ভর করে অনেক মানুষের রুটি-রুজি চলে। অথচ, এই চাষ নিয়ে সরকারি কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ে না। উল্টে, সরকার বিকল্প চাষে উৎসাহ দিচ্ছে। ভাল কথা। কিন্তু বিকল্প কোন চাষে ওই কৃষক পরিবারগুলির রুটি-রুজি চলবে, তা স্পষ্ট করে কিছু নেই।’’ তৃণমূলের কৃষক সংগঠনের কোচবিহার জেলার সহ সভাপতি অমল রায় বলেছেন, ‘‘তামাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল তা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। কিন্তু নেশাদ্রব্যের কথা মাথায় রেখেই বিকল্প চাষের কথা বলা হচ্ছে। কৃষকদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে দিকে নজর রাখছে সরকার।’’