Cooch Behar lake fillings

হেরিটেজ কোচবিহারে হারিয়ে যাচ্ছে দিঘি

রাজ আমলে কোচবিহার শহরে বহু দিঘি খনন করা হয়। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতেই মহারাজারা ওই উদ্যোগ নিয়েছিলেন গবেষকদের দাবি।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৩৩
Share:

মুস্তাফিদিঘির চারপাশ এ ভাবেই দখল হয়ে গিয়েছে। —ফাইল চিত্র।

মজে গিয়েছে দিঘি। তার উপরে ডাঁই করে রাখা হয়েছে আবর্জনা। চার পাশে ধীরে ধীরে গজিয়ে ওঠা কংক্রিট ও টিনের দেওয়াল প্রায় ঘিরে ফেলেছে দিঘি। কোচবিহার শহরের অতি পরিচিত মুস্তাফিদিঘির চারপাশ এ ভাবেই দখল হয়ে গিয়েছে। এখন ডোবার থেকেও খারাপ অবস্থা ওই দিঘির। গত বছর ওই দিঘির একটি অংশ দখলমুক্ত করেছিলেন কোচবিহারের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। যদিও পুরো দিঘি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ওই দিঘি আবার রয়েছে ‘হেরিটেজ’ তালিকাতেও।

Advertisement

শুধু মুস্তাফি দিঘি নয়। শহরের ধোপাদিঘি, লালদিঘি, শিবদিঘিও ক্রমশ দখলের পথে। এবিএনশীল কলেজ লাগোয়া ধোপাদিঘি। দিঘির এক দিকে নার্সিং হস্টেলের একটি অংশ। অন্য দু’পাশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ঘেরা। অভিযোগ, সুনীতি রোড ও হাসপাতাল রোডের ধারে থাকা একাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দোকান বড় করতে গিয়ে দিঘির অংশ দখল করেছে। ভবানীগঞ্জ বাজারের কাছেই লালদিঘি। ওই দিঘিরও একটি অংশে ছোট-ছোট ঘর করে দখল করা হয়েছে। কোচবিহার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শিবদিঘির একটি অংশও একই ভাবে দখল হয়েছে বলে অভিযোগ।

‘হেরিটেজ’ হিসাবে ঘোষণা হওয়ার পরেও বিপন্ন দিঘি সংস্কার বা দিঘির জমি উদ্ধারে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ‘কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটি’র সম্পাদক অরূপজ্যোতি মজুমদার বলেন, ‘‘কোচবিহারকে এক সময়ে দিঘির শহর বলা হত। অনেক দিঘি দখল হয়ে গিয়েছে। কোথাও বহুতল নির্মাণ হয়েছে। বাকি যে দিঘিগুলি রয়েছে, সেগুলির অবস্থাও খারাপ।’’

Advertisement

রাজ আমলে কোচবিহার শহরে বহু দিঘি খনন করা হয়। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতেই মহারাজারা ওই উদ্যোগ নিয়েছিলেন গবেষকদের দাবি। এর মধ্যে রয়েছে সাগরদিঘি, লালদিঘি, চন্দনদিঘি, বৈরাগীদিঘি, মড়াপোড়াদিঘি, কাইয়াদিঘি, শিবদিঘি, নরসিংহদিঘি, লম্বা বা যমুনাদিঘি, গণকেরদিঘি। মড়াপোড়াদিঘি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। দখলের জন্য বিপন্ন লালদিঘি, চন্দনদিঘি। ধোপাদিঘি, মুস্তাফিদিঘি, গণকেরদিঘি, রূপসীদিঘির অবস্থাও খুবই খারাপ।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি জমি উদ্ধারে কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন অনেক দিন আগেই। তার পরে সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযান হয়েছে ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত। কিন্তু হেরিটেজ কোচবিহারের দিঘি উদ্ধারে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বিধানসভায় এ বিষয়ে লিখিত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে। তিনি বলেন, “অনেক দিঘি দখল হয়ে গিয়েছে। কাইয়াদিঘি, ধোপাদিঘি, শিবদিঘি, যমুনাদিঘি সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। ওই সব দিঘি দ্রুত সংস্কার না করলে বেদখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” দিঘিগুলির বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করেছেন কোচবিহারের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি হেরিটেজ কমিটিতেও রয়েছেন। তিনি বলেন, “বেশ কিছু দিঘি সংস্কার করা হয়েছে। কয়েক’টি দিঘি সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু করা হবে। বাকিগুলিও দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। তা হেরিটেজ কমিটিতে আলোচনা হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement