কাঁটাতার, বেড়া গ্রামে ঢোকার পথে। নিজস্ব চিত্র।
মেখলিগঞ্জ ব্লকের কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কলসিগ্রাম। নামের সঙ্গে গ্রামের চরিত্রের ভীষণ মিল। কলসির মুখ আটকে দিলে যেমন কলসি থেকে বের হওয়া মুশকিল, তেমনই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে থাকা বিএসএফের ৩১ নম্বর গেট আটকে দিলেই নেই রাজ্যের বাসিন্দা সংখ্যালঘু প্রধান কলসিগ্রামের ২১১ ঘর মানুষ। বাইরে থেকে এই গ্রামে যেতে হলে নির্দিষ্ট কারণ জানাতে হয়, জওয়ানদের কাছে ভোটারকার্ড জমাও দিতে হয়। এই গ্রামে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা দিয়ে যেতেই দেখা গেল মহম্মদ তইদার হোসেনের। দিনমজুরি করা তইদার লকডাউনের সময় থেকে অর্থাভাবে দিন কাটাচ্ছে।
প্রশ্ন: সরকারি প্রকল্পের সুযোগ ঠিকমতো পাচ্ছেন তো?
তইদার: সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কথা কানে এলেও সুবিধা মেলে না।
প্রশ্ন: কোন প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না ?
তইদার: খাদ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা ঠিক মতো মিলছে না।
প্রশ্ন: কী সমস্যা?
তইদার: তা জানি না। তবে অনেকেই যখন করোনা পরিস্থিতিতে রেশনে চাল ডাল গম পেয়েছে, তখন আমি পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে যাওয়ার পর সামান্য কিছু পেয়েছি।
প্রশ্ন: এই গ্রামে কি কেবল আপনিই এই সুবিধা পাচ্ছেন না?
তইদার: আব্দুল আজিদ ও মফিজুল মহম্মদের মতো আরও কয়েকটি পরিবার ঠিকমতো সুযোগ পাচ্ছে না। তবে এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য আব্দুল মজিদ জানিয়েছেন ঠিকানা ভুলের কারণে সমস্যা হচ্ছে এবং বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা চলছে।
আর একটু এগিয়ে যেতেই দেখা হল ষাটোর্ধ্ব হামিদা বিবির সঙ্গে।
প্রশ্ন: ভাতা পাচ্ছেন তো? আপনার তো পাওয়ার কথা।
হামিদা: পাওয়ার কথা তো সকলেই বলছেন, কিন্তু পাচ্ছি কই। দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে গিয়ে আবেদন তো করে এলাম। দেখা যাক পাই কি না।
গ্রামে থাকা একমাত্র অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি কেন বন্ধ হয়ে আছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। প্রশ্ন তুলেছেন, কেন গ্রামে পরিস্রুত পানীয় জল নেই? কেন গ্রামের একমাত্র রাস্তাটি এখনও পুরোপুরি সংস্কার হল না? তাঁরা আরও জানিয়েছেন, কাঁটাতারের গেট পেরিয়ে গ্রামে আসতে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতেও ভয় পান তাঁরা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরও দিলেন ওঁরা।
প্রশ্ন: কাঁটাতারের গেট কতক্ষণ খোলা থাকে?
উত্তর: সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা।
প্রশ্ন: রাত ৯ টার পর সমস্যা হলে?
উত্তর: তখন উপরওয়ালা ভরসা।
প্রশ্ন: এ কথা বলছেন কেন?
উত্তর: এমনিতেই গ্রামে কেউ অসুস্থ হলে ২০ কিলোমিটার দূরে মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। রাতে কারও কিছু হলে কাঁটাতারের গেট খোলার জন্য পাহারায় থাকা জওয়ানদের দ্বারস্থ হতে হয়। উচ্চ আধিকারিকদের অনুমতি মেলার পর গেট খোলে। এতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়।
প্রশ্ন: গেট পেরিয়ে নিজ গ্রামে ঢুকতে বাসিন্দাদেরও কি সমস্যা হয়?
উত্তর: হ্যাঁ নানা রকম সমস্যা। চার-পাঁচ কেজির বেশি চাল ও অন্যান্য জিনিস কিনে বাড়ি ফেরার সময়ও কৈফিয়ত দিতে হয়। তাই এই গ্রামের ছেল মেয়েদের বিয়ে নিয়ে সমস্যা হয়।
(পরের দর্পণ মঙ্গলবার)