কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
রেজিস্ট্রারকে সাসপেন্ড’করার উপাচার্যের নির্দেশ ‘অবৈধ’ বলে দাবি করল রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যেই ওই চিঠি পৌঁছয় কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তা নিয়ে রেজিস্ট্রার আব্দুল কাদের সফেলি দাবি করেন, উপাচার্যের ওই নির্দেশ ‘অবৈধ’। তিনি রেজিস্ট্রার পদে যে ভাবে কাজ করেছেন, সে ভাবেই করে যাবেন। কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিখিলেশ রায় অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, আব্দুল কাদের সফেলিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তিনি কোনও ভাবেই অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যেতে পারবেন না।
উপাচার্য বলেন, ‘‘আমাকে কেউ, কোনও চিঠি দেয়নি। কেউ সাসপেনশন তুলে নেওয়ার কথাও জানাননি। কেউ কারও মতামত জানাতেই পারেন। তাতে আমাদের কিছু বলার নেই।’’ আব্দুল কাদের সফেলি বলেন, ‘‘উপাচার্য এ ভাবে কোনও নির্দেশ দিতে পারেন না বলে জানিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর। তা অবৈধ বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি যে ভাবে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করে এসেছি, সেটাই করব।’’ তাঁর বিরুদ্ধে তোলা উপাচার্যের অভিযোগ ঠিক নয় বলেও তিনি দাবি করেন। সফেলি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে আমি এত দিন কাজ করে এসেছি। তা আগামী দিনেও করব।’’ এই পরিস্থিতিতে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরে, উত্তেজনা ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তা পুলিশ পর্যন্ত গড়ানোর আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
২০১৭ সালে রেজিস্ট্রার হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ দেন আব্দুল কাদের সফেলি। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব নেন নিখিলেশ রায়। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস তাঁকে ওই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। রাজ্যের তাতে কোনও সায় ছিল না। অভিযোগ, শুরু থেকেই উপাচার্যের কাজে কোনও সহায়তা করছিলেন না রেজিস্টার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রেই জানা গিয়েছে, রেজিস্ট্রার রাজ্যের শিক্ষা দফতরের নির্দেশ মেনেই কাজ করছিলেন। তা নিয়েই ‘সঙ্ঘাত’ তৈরি হয়। গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে সে ‘বিরোধ’ আরও তীব্র হয় সমাবর্তন অনুষ্ঠান ঘিরে। রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, উপাচার্য তথা ‘পার্চেজ় এবং টেন্ডার কমিটি’র চেয়ারম্যানের অনুমতি না নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন রেজিস্ট্রার। এই পরিস্থিতিতে গত ২৪ এপ্রিল রেজিস্ট্রারকে শো-কজ় করেন উপাচার্য। সাত দিনের মধ্যে তিনি শো-কজ়ের উত্তর চেয়েছিলেন। সে মতো উত্তর দিয়েছিলেন রেজিস্ট্রার। তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে শুক্রবার দুপুরে রেজিস্ট্রারকে সাসপেন্ড করেন উপাচার্য।
তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রেজিস্ট্রারকে উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির কপি উপাচার্য-সহ একাধিক জায়গায় দেওয়া হয়। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের একাধিক ধারা উল্লেখ করে সাসপেনশন ‘অবৈধ’ বলে দাবি করা হয়।
তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র নেতা, পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবলু বর্মণ বলেন, ‘‘এক জন রেজিস্ট্রারকে নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়িকিউটিভ কমিটি (ইসি)। সেখানে যাবতীয় বিষয়ে আলোচনার প,রে সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্য এ ভাবে রেজিস্টারকে সাসপেন্ড করতে পারেন না। সে কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছে উচ্চশিক্ষা দফতর।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশের অবশ্য দাবি, উপাচার্যকে সরাসরি চিঠি লিখে ওই ‘সাসপেনশন’ তুলে নিতে বলেনি উচ্চশিক্ষা দফতর। কারণ, সে এক্তিয়ার তাদের নেই।