চা বাগান। ফাইল চিত্র।
নেপালেই ছিল তেনজিং নোরগের পিতৃপুরুষের বাড়ি। সেখান থেকে একসময়ে পালিয়ে তিনি চলে আসেন দার্জিলিংয়ে। এভারেস্টে যখন উঠেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন দু’জায়গার প্রতিনিধি। এ ভাবেই বরাবর কাছাকাছি থেকেছে নেপাল আর দার্জিলিং পাহাড়। কিন্তু গোল বেঁধেছে অন্য মিশ্রণে। সেই মিশ্রণ চায়ের বাক্সে। ২০১৭ সালে পাহাড়ে অশান্তির জেরে দার্জিলিং চায়ের উৎপাদন কমেছিল। চা ব্যাপারিরা সন্দেহ করছেন, তখনই ঢুকতে শুরু করে নেপালের চা। স্বাদে, গন্ধে যার সঙ্গে খানদানি দার্জিলিং চায়ের তফাত করা সম্ভব নয় সাধারণ চোখে। এই ‘ভেজাল’ নিয়েই এখন চিন্তায় চা-মহল।
টি বোর্ডের তথ্য অনুসারে, ২০০৭ সালে দার্জিলিং চায়ের উৎপাদন ছিল এক কোটি কেজি। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে পাহাড়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নড়বড়ে হতে শুরু করার পরে উৎপাদন কমে প্রায় ২০ লক্ষ কেজি। সেই সময়ে তিন বছর দার্জিলিং চায়ের গড় উৎপাদন ছিল ৮০ লক্ষ কেজি। তার পরে ২০১৭ সালের গোলমালের সময়ে তা নেমে দাঁড়ায় ৩০ লক্ষ কেজিতে।
শিলিগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের পরিচালন কমিটির কর্তারা অভিযোগ করছেন, এই উৎপাদন কমার সুযোগ নিয়ে অন্য জায়গার চা দার্জিলিং চায়ের নাম করে বেচা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন । নিলাম কমিটির চেয়ারম্যান অজয় গর্গ বলেন, ‘‘কম দামের নেপাল চা প্যাকেট করে দার্জিলিং চায়ের নামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে দার্জিলিং চায়ের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তরাই, ডুয়ার্স ও অসমের চা।’’ টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে সেই অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা।
চা ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করছেন জলবায়ু ও ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে দার্জিলিং ও নেপাল পাহাড়ের কিছুটা মিল রয়েছে। তাই নেপালের কিছু এলাকার চা স্বাদের দিক থেকে অনেকটা দার্জিলিং চায়ের কাছাকাছি। সেই সব চা ভারতের খোলা বাজারে ঢুকছে বলেই মনে করছেন তাঁরা। টি বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি নেপালের ইলম এলাকায় ক্ষুদ্র চা চাষিদের সমবায় গড়ে ২০টিরও বেশি কারখানা তৈরি করেছে সে দেশের সরকার। শিলিগুড়ির নিলাম কেন্দ্রের পরিচালন কমিটির সদস্য প্রবীর শীল বলেন, ‘‘দার্জিলিং ও নেপাল চায়ের মধ্যে প্রচুর সূক্ষ্ম তফাত রয়েছে। হঠাৎ করে বোঝা কঠিন।’’ টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অরুণকুমার রায় বলেন, ‘‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
শিলিগুড়ি টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা অঙ্কিত লোচন জানিয়েছেন, ভারতীয় বাজারে দার্জিলিং চা ন্যূনতম ৪ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সেখানে নেপালের চায়ের দাম গড়ে ২০০ টাকা কেজি। তরাই, ডুয়ার্স বা অসমের সিটিসি চায়ের দামও নেপালের চায়ের থেকে বেশি। ব্যবসায়ীদের দাবি, অনেক সময় দার্জিলিং চায়ের সঙ্গে নেপালের চা মিশিয়ে বিক্রি হচ্ছে। অঙ্কিত বলেন, ‘‘টি বোর্ডের কড়া ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’’ টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার তরাই শাখার সচিব সুমিত ঘোষও ওই কারবার রোখার দাবি জানিয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটির চেয়ারম্যান ইয়ান গিবস বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে শ্রীলঙ্কায় চা সংক্রান্ত একটি সভায় দার্জিলিং চায়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই চায়ের জোগান কম থাকায় ইউরোপে নেপাল চায়ের বিক্রি বাড়ছে।’’