হাসপাতালে শিশুর মা রঞ্জিতা সিংহ। (ডান দিকে) সিসি ক্যামেরা পরীক্ষায় পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ থেকে তিন দিনের সদ্যোজাত শিশু চুরির অভিযোগ উঠল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ গাইনোকোলজি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগে ঢুকে বহিরাগত এক মহিলা রোগীর পরিবারের সঙ্গে ভাব জমিয়ে, শিশুটিকে কোলে নিয়ে পালায় বলে অভিযোগ। গেটে নিরাপত্তারক্ষী থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে শিশুটিকে নিয়ে মহিলা ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওয়ার্ডে যাতায়াতের করিডরে থাকা একাধিক ক্লোজ়ড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার তার কাটা ছিল বলেও অভিযোগ। হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে। সদ্যোজাতের বাবা নিত্যানন্দ সিংহ মেডিক্যাল ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের তরফে প্রসূতি বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ দিন রাত পর্যন্ত সুপারকে দফতরে কার্যত ঘেরাও করে রাখেন বিজেপি সমর্থক এবং শিশুর পরিবারের লোকেরা।
হাসপাতাল এবং শিশুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়িবাড়ির বাতাসির ভোগভিটার বাসিন্দা রঞ্জিতা সিংহ মঙ্গলবার খড়িবাড়ি হাসপাতালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। শারীরিক পরিস্থিতির কারণে তাঁকে এবং সদ্যোজাতকে বুধবার ভোরে খড়িবাড়ি হাসপাতাল থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়। সূত্রের খবর, সে দিন থেকেই ওয়ার্ডে ঢুকে মাঝবয়সি ওই মহিলা রঞ্জিতা এবং তার মা আলফা রাজবংশীর সঙ্গে ভাব জমায়। এ দিন ‘ভিজ়িটিং আওয়ার’-এ শয্যায় বসে খাচ্ছিলেন রঞ্জিতা। সেই সময় সদ্যোজাত শয্যায় ছিল। আলফা রাজবংশী মেয়েকে খাবার দিচ্ছিলেন। শিশুটি কাঁদতে থাকলে অপরিচিত ওই মহিলা এগিয়ে তাঁকে কোলে তুলে নিয়ে শান্ত করতে থাকে। রঞ্জিতা বলেন, ‘‘আমায় খেতে বলে মহিলা ছেলেকে কোলে তুলে নেয়। আমি পিছন ফিরে খাচ্ছিলাম। মা হাত ধুয়ে বাচ্চাকে নিতে গিয়ে দেখেন, চোখের নিমেষে বাচ্চাটিকে নিয়ে মহিলা কখন বেরিয়ে গিয়েছে!’’ সদ্যোজাতের বাবা বলেন, ‘‘গেটে নিরাপত্তারক্ষী থাকা সত্ত্বেও ‘ডিসচার্জ সার্টিফিকেট’ না দেখিয়ে ওই মহিলা কী ভাবে বাচ্চা নিয়ে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেল, বুঝতে পারছি না!’’
ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ‘‘ভিজ়িটিং আওয়ারে সদ্যোজাতের মা এবং পরিবারের লোকের সামনেই বহিরাগত মহিলা সদ্যোজাতকে কোলে নিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। তার পরেই উধাও হয়ে যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশকে জানানো হয়েছে। তদন্ত-কমিটি গঠন করা হচ্ছে।’’ যদিও অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সামনের সিসি ক্যামেরা অচল ছিল।
কর্তৃপক্ষের দাবি, দেখা করার নির্দিষ্ট সময় প্রচুর লোকজন ঢোকেন। অভিযোগ, নিয়ম না থাকলেও, ‘রোগীর পরিবারের লোক’ বলে পরিচয় দিয়ে আয়ারাও থাকেন ওয়ার্ডে। এ দিন যে মহিলা শিশুটিকে কোলে নিয়ে পালিয়েছে, সে আয়াদের মতো নীল-সাদা শাড়ি পরে ছিল বলেই সদ্যোজাতের পরিবারের দাবি। নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে পরিচয় গড়ে ওঠায় তার কাজকর্মে কারও সন্দেহ হয়নি।
ঘটনার পরে এ দিন সন্ধ্যা থেকেই বিজেপির যুব মোর্চা এবং সদ্যোজাতের পরিবারের লোকেরা সুপারের দফতরে বিক্ষোভ দেখান। মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মণ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে যান। সুপারের দফতরে গিয়ে কথা বলেন। দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিতে বলেন। তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিশু উদ্ধার না করা গেলে, বড় ধরনের আন্দোলন হবে। পরে, সুপার দফতর থেকে বেরোলে আন্দোলনকারীরা তাঁর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন। গাড়ি থেকে নেমে সুপার ফের দফতরে ফিরে যান। আনন্দময় বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে পুকুর চুরি, চাকরি চুরি হচ্ছে। নতুন সংযোজন শিশু চুরি! বহু টাকা খরচ করা হচ্ছে। অথচ, প্রসূতি এবং সদ্য়োজাতদের থাকার জায়গায় নিরাপত্তা ঠিক নেই। সিসি ক্যামেরা অধিকাংশই নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। এই তো পরিস্থিতি!’’
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, রাস্তায় টোটোয় ওঠার সময় মহিলার ‘ভিডিয়ো ফুটেজ’ মিলেছে। সদ্যোজাতের পরিবার মহিলাকে চিহ্নিতও করেছে। কাওয়াখালি এলাকায় টোটো থেকে নেমে ওই মহিলা ছোট গাড়িতে ওঠে বলে জেনেছে পুলিশ। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (সদর) জয় টুডু বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’’
এরই মধ্যে কয়েক জন চিকিৎসক জানান, এ দিনই শিশু বিভাগে ভর্তি এক শিশুকে নিয়ে তার মা কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গিয়েছেন। সুপার জানান, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। দাবি, ছুটি দেওয়ার আগেই অনেকে না বলে চলে যান এবং সে ক্ষেত্রে পুলিশকে তা জানানো হয়।a