রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য বনাম রাজ্যপাল তথা আচার্যের সংঘাতের আবহে এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে আইনি খাতে খরচের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গড়া হল। চার সদস্যের ওই কমিটি গড়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বুধ-বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে। এক মাসের মধ্যে কমিটি রিপোর্ট দেবে, এমনও বলা হয়েছে। কিন্তু চিঠিতে রাজ্যপাল নিজে ওই কমিটি গড়ে দিয়েছেন বলে জানানোয়, ‘ধন্দ’ দেখা দিয়েছে। উপাচার্যদের একাংশের দাবি, রাজ্যপালের দফতরে খোঁজ নিয়ে তাঁরা জেনেছেন, তারা এ নিয়ে ‘অন্ধকারে’। এ ব্যাপারে শুক্রবার ‘আনন্দবাজার’-এর তরফে যোগাযোগ করা হলে, রাজ্যপালের দফতর থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। এ দিন বহু চেষ্টা করেও ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে। জবাব মেলেনি মেসেজের। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল তথা আচার্যের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্যের তরফে মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় বর্তমান অস্থায়ী উপাচার্যেরাও শামিল হয়েছেন। তাঁদের তরফেও আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। সে সবের জন্য প্রাথমিক ভাবে খরচ হয়েছে ১০ লক্ষ টাকার মতো। সে টাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাংশের তরফে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেতন বহির্ভূত খাতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের ত্রৈমাসিকে যে খরচ রাজ্য দিয়ে থাকে, তা অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়। ওয়াকিবহালদের অনুমান, টাকা কম দেওয়ার পিছনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাংশের ‘ইচ্ছে মতো’ খরচ করা রাজ্য সরকার মানছে না— ছিল সে বার্তা। কার্যত, বেতন বহির্ভূত খাতের টাকা থেকে আইনি খরচ দেওয়াতেই ‘আপত্তি’ ছিল উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে। যদিও আইনি খরচ করতে আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অস্থায়ী উপাচার্যেরা দাবি করেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি খরচের জন্য তহবিল থাকে।
তদন্ত কমিটিতে উচ্চ শিক্ষা দফতরের যুগ্ম সচিব, অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টসের ফিনান্স অফিসার বা ডিএফএ, সিনিয়র ল অফিসার, অডিট বিভাগের প্রতিনিধি রয়েছেন। তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশিকায় খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে, যে আইনি খরচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তরফে করা হয়েছে, তা কতটা সঙ্গত, কী ভাবে এবং কোথা থেকে ওই খরচের টাকা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো?
রাজ্যপাল তথা আচার্যের সঙ্গে এই আইনি লড়াইয়ের বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। সে মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইনি তহবিলের থেকে খরচ দেওয়া হয়েছে। অস্থায়ী উপাচার্যদের একাংশের সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ক্ষেত্রে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ৬০ হাজার টাকা করে দেয়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অন্যতম। ৪০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা, রায়গঞ্জ, গৌড়বঙ্গের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের। দক্ষিণ দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ারের মতো বাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার দেওয়ার কথা ঠিক হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে সে টাকা দিয়েওছে। কেউ তা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। সে কারণে তদন্ত কমিটি গড়ার চিঠি পেয়ে উপাচার্যদের একাংশ আচার্যের দফতরে জানতে চান, যে অর্থ খরচ করা নিয়ে আচার্যের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে তিনি নিশ্চয়ই তদন্তের নির্দেশ দেননি। একাধিক উপাচার্যের দাবি, তখন তাঁদের জানানো হয়, এই তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে, আচার্যের দফতরকে ‘অন্ধকারে’ রেখে।
৩ জানুয়ারি তারিখের চিঠিটি রাজ্য শিক্ষা দফতরের এক কর্তা করেছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৯৭৬ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, ক্ষমতা বলে রাজ্যপাল এই কমিটি গড়েছেন। শিক্ষা দফতরের এক কর্তা দাবি করেন, সরকারি রীতি মেনে ওই বয়ানে চিঠি লেখা হয়েছে। তা নিয়ে প্রশ্ন কেন উঠছে, তাঁরা বুঝতে পারছেন না