রাজ্য বাদ, চা বৈঠকের ডাক দিল্লির

উপনির্বাচনের পরে সক্রিয় পদ্মগত লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই বিজেপির নেতারা ভোটে জিতে চা বাগান সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন। ভোটে জেতার পরই জলপাইগুড়ির জেলার নাগরাকাটায় দলের প্রার্থী জন বার্লার উদ্যোগে একটি বন্ধ বাগান খোলা হয় বলে বিজেপির তরফে দাবি করা হয়।

Advertisement

পার্থ চক্রবর্তী

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৩৩
Share:

প্রতীকী চিত্র।

উত্তরবঙ্গের চা বাগান সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হলেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। গয়াল তাঁর দফতরের যুগ্ম সচিব টি-বোর্ড, বাগান মালিক ও ট্রেড ইউনিয়নের নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডাকার নির্দেশ দিলেন। এই মুহূর্তে দিল্লিতে থাকা বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলা শীর্ষ নেতৃত্বের এই দাবিকে ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তৃণমূলের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যকে এড়িয়ে এ ভাবে বৈঠক ডাকা যায় না। সংবিধানকে অমান্য করে এ ধরনের কাজ করতে চাইছেন তাঁরা। চা শ্রমিকরাই এর জবাব বিজেপিকে দেবে। যদিও বিজেপির জেলা শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে এর সুস্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

Advertisement

গত লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই বিজেপির নেতারা ভোটে জিতে চা বাগান সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন। ভোটে জেতার পরই জলপাইগুড়ির জেলার নাগরাকাটায় দলের প্রার্থী জন বার্লার উদ্যোগে একটি বন্ধ বাগান খোলা হয় বলে বিজেপির তরফে দাবি করা হয়। কিন্তু তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, তার পর থেকে বাগানের উন্নতিতে শুধু দিল্লি বেড়াতে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে দেখা যায়নি বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের। যার ফলে আলিপুরদুয়ার জেলার চা বলয়ে বিজেপির শক্তি অনেকটাই কমেছে বলে দাবি তৃণমূলের। এই অবস্থায় চা বলয়ের রাজনীতিতে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতেই দলের নেতারা বারবার দিল্লি যাচ্ছেন বলে অভিযোগ খোদ বিজেপি নেতা-কর্মীদের একাংশেরও।

এরই মধ্যে দিন দুয়েক আগে দিল্লিতে যান বিজেপির জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা সহ দলের নেতারা। বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে চা বাগান সমস্যা নিয়ে দেখা করেন তাঁরা। সঙ্গে ছিলেন দলের আলিপুরদুয়ারে সাংসদ জন বার্লা ও দার্জিলিং-এর সাংসদ রাজু বিস্ট। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শে এরপর তাঁরা কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে দেখা করতে যান। বিজেপির জেলা সভাপতির দাবি, চা বাগান সমস্যার খুঁটিনাটি বিষয় তাঁরা কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে চা বাগানের উন্নতিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনেরও আর্জি জানান তাঁরা। গঙ্গাপ্রসাদের দাবি, “এরপরই কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী তাঁর জয়েন্ট সেক্রেটারিকে পনেরো দিনের মধ্যে টি বোর্ড, বাগান মালিক ও বাগানের শ্রমিক সংগঠনগুলিকে নিয়ে বৈঠক ডাকতে বলেছেন।” আর তাতেই উঠেছে বিতর্ক।

Advertisement

চা বাগান তৃণমূল মজদুর ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি মোহন শর্মার কথায়, ‘‘বিজেপি সংবিধানকে তোয়াক্কাই করছে না। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে রাজ্যকে এড়িয়ে এ ভাবে কেন্দ্র বৈঠক ডাকতে পারে না। আসলে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে যা খুশি তাই করছেন বিজেপি নেতারা।’’ যার উত্তরে গঙ্গাপ্রসাদ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যেটুকু বলেছেন সেটুকুই সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছি। এর বাইরে কিছু বলতে পারব না।’’

বিজেপির জেলা নেতারা সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি পোস্ট করে দাবি করেন, এদিন দলের সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় চা বাগানে মানব পাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ, সেখানে লকেট না কি উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় তিনশোটি চা বাগানের মধ্যে দু’শোটি বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। মোহনের কথায়, ‘‘আসলে চা বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে অভিনয় করছেন বিজেপির নেতারা। তাই কিছু না জেনেই এ ধরনের মন্তব্য করছেন।’’ পাল্টা গঙ্গাপ্রসাদ বলেন, কুড়িটি বাগান বন্ধ বলতে গিয়ে সাংসদ ভুল করে দু’শো বলে ফেলেছেন। এটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা উচিত নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement