উদয়ন গুহ। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-খুনের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার-বিরোধী বিক্ষোভের তুলনা টেনে ফের বিতর্কের মুখে পড়লেন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। বৃহস্পতিবার বিকেলে সামাজিক মাধ্যমে করা একটি পোস্টে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি উদয়ন লিখেছেন, ‘কেমন যেন মিল পাওয়া যাচ্ছে। ছিল সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলন, হয়ে গেলো হাসিনার পদত্যাগ চাই। এখন তিলোত্তমার খুনিদের শাস্তি ভুলে, মমতার পদত্যাগ চাই।’
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্য এখন উত্তাল। অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে গত ১৪ অগস্ট মধ্যরাতে রাস্তায় নামেন অসংখ্য মানুষ। তারই মধ্যে উদয়নের ওই পোষ্ট ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও বাংলাদেশের সরকার-বিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে দাবি করেন, বিক্ষোভের ধুয়ো তুলে এ রাজ্যেও বিরোধীরা সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিরোধীদের পাল্টা দাবি, মানুষের ক্ষোভ দেখে আসলে ভয় পাচ্ছেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। সে জন্যেই এমন মন্তব্য করছেন। উদয়ন অবশ্য বলছেন, ‘‘বিরোধীদের আসল উদ্দেশ্য সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আরজি করের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী নিজে অভিযুক্তদের ফাঁসি চেয়েছেন। সেখানে বিজেপি বা সিপিএমের মতো দল মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছেন। সে কথাই আমি লিখেছি।’’
তৃণমূলের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায়ও এই প্রসঙ্গে বিরোধীদের আক্রমণ করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘দফা এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ— বিজেপির এই দাবি প্রমাণ করে আরজি করের চিকিৎসক খুনের ঘটনায় দোষীদের চরম শাস্তি চাওয়া এদের উদ্দেশ্য নয়। আসলে রাজনৈতিক ভাবে বাংলা দখল করতে না পেরে চরম হতাশা থেকে এই ধরনের অর্বাচীনের মতো দাবি তুলছে বিজেপি।’ বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসুর পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের অপশাসনে মানুষ ক্ষুব্ধ। তাই সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন। তা দেখে ভীত হয়ে এমন মন্তব্য করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।’’
উদয়ন কোচবিহার জেলার দিনহাটা বিধানসভার বিধায়ক। বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে ওই এলাকার অবস্থান। দিন কয়েক আগেই বাংলাদেশের সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলনের জেরে উত্তাল বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত হন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি, দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয় তাঁকে। ওই প্রসঙ্গ টেনে এ-রাজ্যের আন্দোলন নিয়ে উদয়নের পোস্ট ঘিরে তাই স্বাভাবিক ভাবেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। নাম প্রকাশে তৃণমূলের এক নেতা বলেছেন, ‘‘এটা ভাবা একেবারেই ঠিক নয়। ওটা বাংলাদেশ, আর এটা পশ্চিমবঙ্গ। মানুষ এখানে তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছে।’’