Udayan Guha

বাংলার স্বার্থেই ভোটে ‘অস্ত’ যেতে তৈরি তৃণমূলের উদয়ন! বললেন, বিজেপির কাছে হারতেও রাজি

বাংলা ভাগ করার কথা বললেও ত্রিপুরার আদিবাসীদের আলাদা রাজ্যের দাবিকে কেন নাকচ করে দিচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব, সেই প্রশ্ন তুলে জবাব দাবি করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:১৬
Share:

বুধবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার সাত নেতৃত্বদের সঙ্গে বৈঠক করেন উদয়ন। নিজস্ব চিত্র।

আগামী বিধানসভা নির্বাচনে যদি কিছু আসনে বিজেপির কাছে হেরে যেতে হয় তো তা-ও মঞ্জুর। কিন্তু বাংলাকে তিনি ভাগ হতে দেবেন না। শিলিগুড়িতে এমন দাবিই করলেন রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ। বাংলা ভাগ করার কথা বললেও ত্রিপুরার আদিবাসীদের আলাদা রাজ্যের দাবিকে কেন নাকচ করে দিচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব, সেই প্রশ্ন তুলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব চেয়ে হুঙ্কারও দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন। বুধবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার সাত নেতৃত্বদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সেই বৈঠকের পর প্রথমেই ত্রিপুরা প্রসঙ্গে বিজেপিকে একহাত নেন মন্ত্রী।

Advertisement

সম্প্রতি বৈঠক করে ত্রিপুরার আদিবাসীদের আলাদা রাজ্য ‘ত্রিপুরাল্যান্ড’ তৈরির দাবিকে নাকচ করে দেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। সেই প্রসঙ্গ টেনেই উদয়নের মন্তব্য, ‘‘বিজেপি দ্বিচারিতা করে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। ত্রিপুরা এবং বাংলা নিয়ে আলাদা আলাদা পন্থা অবলম্বন করছে তারা। এক দিকে ত্রিপুরা ভাগের দাবিকে মান্যতা দিচ্ছে না। অন্য দিকে, বাংলা নিয়ে তাদের মত ভিন্ন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব গঙ্গার ও পারে আলাদা কথা বলছেন আবার এ দিকে আলাদা কথা বলেন। শুভেন্দু থেকে সুকান্ত, দিলীপ এমনকি উত্তরবঙ্গ থেকে যিনি কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেই নিশীথ প্রামাণিক এবং জন বার্লারা সব সময়ই বাংলা ভাগের পক্ষে কথা বলেছেন।’’ এর পরেই উদয়নের হুঁশিয়ারি, ‘‘ত্রিপুরার ক্ষেত্রে তাদের আলাদা নীতি আবার বাংলার ক্ষেত্রে আলাদা কেন? এগুলো করে মানুষকে তাঁরা ভুল বোঝাচ্ছেন। আমরা ৪৮ ঘণ্টা সময় দিলাম। বিজেপিকে তার মধ্যে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। তারা কি বাংলা ভাগের পক্ষে না তার বিরুদ্ধে, তা-ও জানাতে হবে।’’

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিজেপির পক্ষ থেকে কোনও উত্তর না মিললে কী পরিকল্পনা? উদয়ন বলেন, ‘‘আমাদের কিছু করার নেই৷ বিজেপি যে দ্বিচারিতায় বিশ্বাসী সেটাই প্রমাণ হবে। বিজেপি যে ভণ্ড, এটাই তুলে ধরব সাধারণ মানুষের কাছে। আমরা সব সময়েই বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে। ভাগ করে কিছু হয় না। গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের সময়েই মুখ্যমন্ত্রী তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। হিন্দু-মুসলিম বিভেদ আর চলবে না সেটা বিজেপি বুঝে গিয়েছে। সেই কারণেই আলাদা রাজ্যের দাবি তুলে খেলায় মেতেছে। বাংলা ভাগ আটকাতে যদি আগামী নির্বাচনে আবারও বিজেপির কাছে সিট হারাতে হয়, তা হলে হারাব। কিন্তু বাংলা ভাগ হতে দেব না।’’

Advertisement

বুধবার শিলিগুড়ির বৈঠকে উদয়ন ছাড়াও তৃণমূলের জেলার নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দার্জিলিং জেলা তৃণমূল (পাহাড়) সভাপতি শান্তা ছেত্রী, দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি (সমতল) পাপিয়া ঘোষ, আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইক, কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দে, জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি মহুয়া গোপ, উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি মৃণাল সরকার।

উদয়নের মন্তব্য নিয়ে সরব বিজেপিও। মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক তথা শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আনন্দময় বর্মণ বলেন, ‘‘বিজেপি প্রথমে রাজ্য ভাগের কথা বলেনি। হ্যাঁ বেশ কিছু জায়গায় জনপ্রতিনিধিরা হয়তো সে প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। তবে রাজ্য বা কেন্দ্র এমন ধরনের মন্তব্য কখনই করেনি। দ্বিতীয়ত রাজ্যে যে ধরনের অরাজকতা চলছে বা যে ভাবে নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতারি সামনে আসছে সে সব থেকে চোখ ফেরাতেই তৃণমূলের নতুন কর্মসূচি। উল্টে তো তারাই (তৃণমূল নেতারা) এখন বেশি বেশি করে ভাগের কথা বলেন।’’

৪৮ ঘণ্টায় মধ্যে উত্তর দেওয়ার প্রসঙ্গে আনন্দ জানান, ‘‘সেটা কেন্দ্র বা রাজ্য নেতৃত্ব বলবেন। তবে তৃণমূলের কোন নেতা বা মন্ত্রী কী বলল, তার জন্যপাল্টা বিজেপিকে সাংবাদিক বৈঠক করতে হবে এমন দুর্দিন বিজেপির আসেনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement