নাগরাকাটার ধরণীপুর চা বাগান খুলে গেল শুক্রবার থেকে। উদ্বোধনে এসে শ্রমিকদের নিয়ে চা পাতা তুললেন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণমন্ত্রী বুলু চিক বরাইক। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
২০ বছর ধরে মালিকহীন অবস্থায় পড়ে ছিল ডুয়ার্সের ধরণীপুর চা বাগান। চায়ের কাঁচা পাতা তুলে, বিক্রি করে এত দিন কোনও মতে দিন গুজরান করেছেন বাগানের কর্মহীন চা শ্রমিকেরা। কিন্তু গত দু’দশকে তাঁরা ছিলেন কার্যত অভিভাবকহীন। এ বার সে দশা ঘুচল ধরণীপুর চা বাগানের। তিনশোর বেশি স্থায়ী শ্রমিক ও চারশো হেক্টরের বেশি জায়গা জুড়ে থাকা এই চা বাগান রাজ্যের মধ্যে সব থেকে বেশি দিন বন্ধ থাকার পরেপুনরায় সচল হল। দায়িত্ব নিলেন দুই নবীন। বছর পঁয়ত্রিশের শম্ভু শা এবং বছর বত্রিশের গণেশপ্রসাদ কুশহওয়ারা।
২০০২ সালে রেডব্যাঙ্ক গোষ্ঠী তাদের তিনটি চা বাগান রেডব্যাঙ্ক, সুরেন্দ্র নগর এবং ধরণীপুরে তালা ঝুলিয়ে বাগান ছাড়ে। এর পরে, বহু বৈঠক নিষ্ফলা হতে হতে শ্রমিকদের মনোবল তলানিতে এসে ঠেকে। বাগানের জমির লিজ় বাতিলের পরিকল্পনা শুরু হয়। রাজ্য সরকার লিজ় বাতিল করে, একে-একে নতুন মালিক বসাতে শুরু করে। রেডব্যাঙ্ক, সুরেন্দ্রনগরে সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাগান খোলা হলেও, ধরণীপুরের তালা খোলেনি। এ দিন অবশেষে সে জট কেটে নতুন মালিকপক্ষ এলেন।
শুক্রবার রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণমন্ত্রী বুলু চিক বরাইক যখন বাগানের গেটে ফিতে কাটছেন, তখন শ্রমিকদের উচ্ছ্বাস ছিল বাঁধ ভাঙা। ধরণীপুরের নতুন মালিক তথা ডিরেক্টর শম্ভু শা এবং গণেশ বলেছেন, ‘‘আমরা সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছি। অনেক কষ্ট করে বাগান মালিক হয়েছি, তাই শ্রমিকদের কষ্ট বুঝি।’’ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, চা বাগান মালিকেরা বংশ পরম্পরায় এই ব্যবসায় যুক্ত থাকেন। যাঁরা চা বাগান বিক্রি করেন, তাঁরাওসাধারণত বড় ব্যবসায়ীদের হাতেই বাগান দেন। এ ক্ষেত্রে নবীন দুই মালিকের দায়িত্ব নেওয়ার ঘটনা তরাই-ডুয়ার্সের ইতিহাসে প্রায় ‘নজিরবিহীন’ বলেই মনে করছেন অনেকে।তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক সংগঠনের চেয়ারম্যান নকুল সোনার, জেলা তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি রাজেশ লাকরা, চা বাগানের সংগঠনের সাধারণ সচিব পুলিন গোলদার, সঞ্জয় কুজুর এ দিন শ্রমিক-মালিক পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রেখে চলার বার্তা দেন।
ধরণীপুরে এক সময় ৪০০ হেক্টরের বেশি চা বাগান থাকলেও, বর্তমানে ২৫০ হেক্টরের থেকেও কম জায়গায় চা বাগিচা রয়েছে। সে সংখ্যা দ্রুত বাড়াবার লক্ষ্যমাত্রাও নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া,ধরণীপুর যেহেতু রেডব্যাঙ্ক গোষ্ঠীর বাগান ছিল, তাই সেই বাগানেই কাঁচা পাতা তুলে পাঠানোর রেওয়াজ ছিল। এখানে তাই কোনও কারখানা নেই। দ্রুত কারখানা তৈরির চিন্তাভাবনাও শুরু করেছেন মালিকপক্ষ ।