সোনা পাচারে ধৃতেরা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
সোনার বিস্কুট তুলোয় মুড়িয়ে গাড়ির পেট্রোল ট্যাঙ্কের মধ্যে লুকিয়ে পাচার করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দাদের (ডিআরআই) হাতে ধরা পড়ল তিন পাচারকারী। বুধবার রাতে সোনা পাচারের অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। গাড়ি মেরামতির মিস্ত্রি নিয়ে এসে গাড়ি পরীক্ষা করানোর পর ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় সোনার প্যাকেটগুলি। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ওই গাড়িটিও। বৃহস্পতিবার ধৃতদের শিলিগুড়ি আদালতে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে দেবাঞ্জন ঘোষের এজলাসে পেশ করা হলে জামিন নামঞ্জুর হয়ে যায়। গোয়েন্দাদের আইনজীবী রতন বণিক বলেন, ‘‘ধৃতদের কাছ থেকে প্রায় ২০ কেজি সোনার বিস্কুট উদ্ধার হয়েছে। মোট ১২০টি বিস্কুট ছিল। যাঁর বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।’’
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, মায়ানমার থেকে মণিপুরের মোরে সীমান্ত দিয়ে অসম হয়ে বিপুল পরিমাণ সোনা কলকাতায় পাচার করার চেষ্টা হচ্ছিল। ডিআরআই অফিসারদের কাছে, গাড়ির নম্বর ও রং কী সে সমস্ত খবর চলে আসে। তাঁরা ফাঁসিদেওয়ার ঘোষপুকুর টোল গেটের কাছে অপেক্ষায় ছিলেন। বিকেল পাঁচটা নাগাদ লাল গাড়িটি এলে গাড়ি আটকে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু বহু তল্লাশিতেও কিছু পাওয়া যায়নি। এর আগে বহুবার অভিনব কায়দায় সোনা পাচারের অভিজ্ঞতা থাকায় গোয়েন্দারা গাড়ি সহ তিন আরোহীকে আটক করে প্রধাননগরে তাঁদের দফতরে নিয়ে যান। সেখানে ডাকানো হয় নির্দিষ্ট কোম্পানির বিশেষজ্ঞ মিস্ত্রিকে।
তিনি গিয়ে গাড়িটির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে শেষ পর্যন্ত পেট্রোল ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে তুলোয় মোড়া চারটি প্যাকেট উদ্ধার করেন।। প্রতিটি প্যাকেটে ৩০ টি করে বিস্কুট ছিল। প্রতিটি বিদেশে তৈরি বলে ধৃতেরা জানিয়েছে। এগুলির মোট ওজন ১৯ কিলো ৯৮০ গ্রাম। প্রতিটি ২৪ ক্যারেট বলে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে। এর বাজার মূল্য ৫ কোটি ৪০ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা। ডিআরআই সূত্রের খবর, ধৃতদের নাম মহম্মদ আব্দুল হান্নান, সালে আহমেদ ও মহম্মদ সানওয়ার। প্রত্যেকের বাড়ি অসমে। প্রথম দু’জনের বাড়ি কামরূপ ও শেষজনের বাড়ি গোয়ালপাড়ায়। তবে যে গাড়িটি উদ্ধার হয়েছে তা আব্দুল কালামের নামে নথিভুক্ত করা রয়েছে। তার দুটি ঠিকানা উদ্ধার হয়েছে। একটি মণিপুরে অপরটি অসমের। এই গাড়িটি কেনা হয়েছে কলকাতার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে।
গত কয়েক মাসে একাধিকবার সোনা পাচারের চক্র ধরা পড়েছে শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকাতে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পাচারকারীরা নানা কায়দায় বিদেশি সোনা পাচার করছিল। শিলিগুড়িকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় রাজস্ব দফতরের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। শিলিগুড়ি, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি পুলিশ, শুল্ক দফতরকেও সতর্ক করা হয়েছে।