গরুমারার গাছবাড়ি।
ডুয়ার্সের গরুমারা জাতীয় উদ্যানের দক্ষিণ প্রান্তে, জঙ্গলের গা ঘেঁষে তৈরি হয়েছিল গাছবাড়ি। দু’টি শালগাছের মধ্যে। গাছের মধ্যেই বড় ঘর, সঙ্গে স্নানঘর বা ‘ওয়াশরুম’। রাজ্যে এমন ‘কটেজ’ প্রথম বার তৈরি হওয়ায় আকর্ষণও ছিল বিস্তর। দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা আসতেন দক্ষিণ ধূপঝোরায়। বন উন্নয়ন নিগম নয়, সরাসরি বন দফতরের বন্যপ্রাণ শাখার ইকো-টুরিজ়ম প্রকল্প। গাছবাড়ির সঙ্গে বাড়তি আকর্ষণ হাতি-সাফারি, হাতির স্নান প্রত্যক্ষ করা। কিন্তু কোভিড সংক্রমণের সময় থেকে ধূপঝোরা হারিয়েছে তার গৌরব। গাছবাড়িটি সংস্কারের অভাবে বন্ধ। হাতি-সাফারি হয় না। শুধু হাতেগোনা কয়েকটি ‘কটেজ’ খোলা পর্যটকদের জন্য।
জলদাপাড়ার হাতি-সাফারির পরে ধূপঝোরারই চাহিদা বেশি পর্যটকদের কাছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধূপঝোরার উন্নতি হয়নি। বন দফতরের উদাসীনতায় এই অবস্থা বলে অভিযোগ। কলকাতা, দক্ষিণবঙ্গ, উত্তরবঙ্গের পর্যটকেরা এখনও ধূপঝোরায় যান। পরিস্থিতির কথা শুনেছেন রাজ্যের উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রাজেন্দ্র জাখর। তিনি বলেছেন, ‘‘বর্ষার পরের মরসুম থেকে ধূপঝোরায় হাতি-সাফারি চালু করার চেষ্টা চলছে। গাছবাড়ির সংস্কারের জন্য বনাধিকারিককে বলা হচ্ছে। সংস্কারের বিষয়টি দেখা হবে।’’
বন দফতর সূত্রের খবর, বাম-আমলে তৈরি বন দফতরের এই ‘ইকো-টুরিজ়ম কটেজ’ পর্যটন মহলে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। গাছবাড়িতে থাকা, ভোরে গরুমারায় হাতি-সাফারি, বিকেলে ‘কটেজ’ লাগোয়া মূর্তি নদীতে হাতির স্নানে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সন্ধ্যায় আদিবাসী নৃত্যের বন্দোবস্তও ছিল। আর সেই সঙ্গে স্থানীয় মহিলাদের তৈরি মাছ, মাংসের নানা পদের ব্যবস্থাও ধূপঝোরাকে আলাদা পরিচিতি দেয়। করোনার সময় থেকে সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ হয়। ধূপঝোরাও বন্ধ হয়। পরের বছর চালুর পরে হাতি-সাফারি প্রথম বন্ধ রাখা হয়। পরে, ‘কোর’ জঙ্গলে ‘গ্যানমান’ ছাড়া সাফারি করা নিয়ে দ্বিমত দেখা দেয়। পর্যটকদের হেঁটে গিয়ে জঙ্গলের সামনে থেকে হাতির পিঠে উঠতে হত। বিষয়টির সুরাহা না করে বনকর্তারা হাতি-সাফারি বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ।
এর মধ্যে একটি ‘কটেজ’ বন্ধ রাখা হয় তার বাথরুমের দুরবস্থার কারণে। বেশির ভাগ ঘরেই বাথরুমের কলে জল ঠিক মতো পড়ে না। সব ক’টিরই ছাদ এবং দেওয়াল খারাপ, চটে গিয়েছে রং। আগাছার জঙ্গল ঘিরেছে পিলখানা। শালগাছ বড় হয়ে গাছবাড়ির মেঝে ফাটিয়ে দিয়েছে। কাঠের সিঁড়ির অবস্থাও খারাপ। যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। বন দফতরের অফিসারেরা জানান, গাছবাড়ি-সহ ‘কটেজ’গুলির আমূল সংস্কার প্রয়োজন। দু’দশকে তেমন কাজই হয়নি। আশপাশে বেসরকারি ‘রিসর্ট’ গড়ে উঠছে। সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর আর উন্নত পরিষেবা পাচ্ছেন পর্যটকেরা। সেখানে সরকারি কেন্দ্রটি সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে।a