ফাইল চিত্র।
নতুন করে সেজে উঠেছে সব। চারদিক রকমারি আলোয় আলোকিত। মাঠের ঘাস ছোট ছোট করে ছাঁটা হয়েছে। আশপাশের আগাছা পরিষ্কারের কাজ চলছে। দীর্ঘসময় অব্যবহারে, তাই কটেজগুলিও ঝেড়েমুছে ঝা চকচকে করা হচ্ছে। কিছু জায়গায় পড়েছে রঙের প্রলেপ। পর্যটকদের জন্য এমন ভাবেই তৈরি হচ্ছে তরাই-ডুয়ার্স থেকে পাহাড়ের পর্যটনকেন্দ্রগুলি। বুধবার থেকে খুলে দেওয়া হল জঙ্গল। অন্যবার, এই সময় থেকেই পর্যটকের ভিড় শুরু হয়। এ বার করোনার কারণে পরিস্থিতি ভিন্ন। চিলাপাতার বেসরকারি কটেজের এক ম্যানেজার জানালেন, পুজোর অপেক্ষাতেই তাঁরা সবাই বসে রয়েছেন।
পুজোর আশায় বন উন্নয়ন নিগমের পর্যটনকেন্দ্রগুলিও। এখন একজন-দু’জন করে পর্যটকের যাতায়াত শুরু হয়েছে। ‘থার্মাল গান’, স্যানিটাইজ়ার নিয়ে প্রস্তুত কর্মীরাও। বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান উদয়ন গুহ বলেন, ‘‘অনেকদিন ধরেই বাংলো বন্ধ ছিল। সদ্য খুলেছে। এখনও পর্যটক সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা পুজোর বুকিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।’’
করোনার প্রকোপে দীর্ঘসময় লকডাউন চলছে। তার জের পড়েছে পর্যটন ব্যবসার উপরে। সরকারি ও বেসরকারি সমস্ত বাংলো বন্ধ হয়ে যায়। ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর্যটকরাও আর জঙ্গল বা পাহাড়মুখী হননি। দুই-এক জায়গায় স্থানীয় বাসিন্দারাও বাইরের মানুষজনের যাতায়াতের উপরে আপত্তি জানিয়েছিলেন। সবমিলিয়ে কোটি কোটি টাকা লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়েছে বলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বহু মানুষও। পর্যটকদের জন্যই আয়ের মুখ দেখা ছোট ছোট দোকান কার্যত বন্ধ হতে বসেছে।
চিলাপাতা, রাজাভাতখাওয়া, লাভা, লেপচাজগত, প্যারেন, গরুমারা, বামনপোখরি, চাপড়ামারি, সুকনা, জয়ন্তী সর্বত্র একই চিত্র। যদিও দক্ষিণবঙ্গের মুকুটমণিপুর, গড়চুমুক, গড়পঞ্চকটের চিত্র খানিকটা অন্যরকম। বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান জানান, ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব বন্ধ ছিল। এখন খুলেছে। তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গের পর্যটনকেন্দ্রে বড় সমস্যা নেই। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে ট্রেন চলাচল এখনও স্বাভাবিক নয়। তাই পর্যটক তেমন নেই।’’
আনলক পর্বে এখন বাংলো ফের খুলে গিয়েছে। কিন্তু পর্যটক নেই। চিলাপাতার একটি কটেজের কর্মীরা জানান, গত কয়েকদিনে সামান্য কয়েকজন পর্যটক পেয়েছিলেন তাঁরা। প্রত্যেকেই উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা। তাঁরা জানান, স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে সমস্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। তাপমাত্রা মেপে নেওয়ার পরেই ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এর পরেই পর্যটকদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ, জিনিসপত্র সবই ভাল করে স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিদিন বাংলো জীবাণুমুক্ত করা হয়। রান্নাঘরও চালু হয়েছে।
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলেপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘লকডাউনে সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে পর্যটন ব্যবসা। পুজোর মুখে ফের পর্যটকদের ভিড় হবে, এই আশায় সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’’