রাস্তায়: নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তৃণমূলের মিছিল। মঙ্গলবার কোচবিহার শহরে। নিজস্ব চিত্র
খোদ তৃণমূলের দাবি, লক্ষাধিক লোকের ভিড় হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরোধিতায় ডাকা মিছিলে। যদিও পুলিশের হিসেব, সংখ্যাটা ৪০ হাজার হবে। তবে ভিড় যা-ই হোক না কেন, কোচবিহারের রাস্তায় মিছিলে উদ্বাস্তু-রাজবংশী-সংখ্যালঘুদের ঐক্য দেখিয়ে বিজেপিকে ‘পাল্টা’ চ্যালেঞ্জ ছুড়ল তৃণমূল। জেলার রাজনৈতিক মহলের তেমনটাই দাবি।
মঙ্গলবার মিছিলে উদ্বাস্তু-রাজবংশী-সংখ্যালঘুরা একই সুরে আওয়াজ তুললেন, ‘এনআরসি নয়, সিএএ নয়, আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই।’ নজরকাড়া সেই মিছিল থেকেই আওয়াজ উঠছিল, ‘জেএনইউয়ে হামলাকারীদের শাস্তি চাই।’ তাই সংখ্যা নয়, মিছিলে একই সঙ্গে রাজবংশী ও সংখ্যালঘুদের হাজির করাতে পেরে খুশি জেলা তৃণমূল নেতারা। এর আগে ৩০ ডিসেম্বর শহরে সিএএ-র সমর্থনে ডাকা মিছিলে রাজবংশী ও নমশূদ্রদের হাজির করেছিল বিজেপি। তাতে কিছুটা হলেও চিন্তায় পড়ে যান তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিন তাঁরা স্বস্তিতেই ফিরলেন। এ দিন মিছিলের নেতৃত্ব দেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তিনি বলেন, “কেউ যদি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন, তাহলে প্রমাণিত তিনি ভারতীয় নাগরিক নন। এটাই করতে চাইছে বিজেপি। উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের বিপদে ফেলতে চাইছে তারা। সংবিধানকে তছনছ করে দিতে চাইছে।” তিনি আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রী এবার সিএএ এবং এনআরসি-র বিরোধিতায় জেলায় জেলায় পদযাত্রায় যোগ দেবেন।
এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ রাসমেলার মাঠে জমায়েতের ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। ওই সময়ের মধ্যে নেতারা মাঠে পৌঁছলেও কর্মী-সমর্থকদের সেভাবে দেখা যায়নি। ফলে মাঠের মধ্যে চিন্তান্বিত ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় দলের জেলা সভাপতি বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ, পার্থপ্রতিম রায়দের। কিছুক্ষণের মধ্যে অবশ্য মাঠ ভরতে শুরু করে। মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি থেকে শুরু করে তুফানগঞ্জ, দিনহাটা, মাথাভাঙা শীতলখুচি থেকে কর্মী-সমর্থকদের গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় মাঠে। শহর লাগোয়া এলাকা থেকে হেঁটে, অটো-টোটোয় লোকজন ঢুকতে শুরু করেন।
আটপুকুরি থেকে যোগ দেন আনসার আলি, পাতলাখাওয়া থেকে শিবেন বর্মণ, দ্বিজেন বর্মণ, নিশিগঞ্জের দীপঙ্কর দে, নন্দন চন্দেরা। নন্দন জানান, তাঁদের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। তিনি বলেন, “আমাদের জন্ম এ-দেশেই। আমরা কখনও বাংলাদেশ যাইনি। আমরা সবাই তো এই দেশেরই নাগরিক।” একই সুরে আনসার, শিবেনদের প্রশ্ন, তাঁরা তো সবাই এ দেশেরই নাগরিক। নতুন করে আবার কীসের প্রমাণ? তৃণমূলের মিছিল থেকেই আওয়াজ উঠতে থাকে, ‘আমরা কারা? নাগরিক।’ মিছিলের হাঁটছিলেন তৃণমূলের ছাত্র-নেতা সায়নদীপ গোস্বামী। সেইসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, বিধায়ক উদয়ন গুহ, মিহির গোস্বামীরা একইসঙ্গে হাঁটলেন। নিজেদের মধ্যে দিয়ে রাখলেন ‘ঐক্যে’র বার্তাটাও।
বিজেপির জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা বলেন, “টাকার জোরে, ভয় দেখিয়ে মিছিলে লোক এনেছে তৃণমূল। অনেককেই সরকারি সুযোগ-সুবিধের নাম করে আনা হয়েছে।’’