‘মাসিমা বাড়িতে আছেন?’ হাঁক দিতে দিতেই হেঁশেলের সামনে হাজির দু’জন। হাতে বেশ কিছু নথিপত্র। এনআরসি ও সিএএ কী জানেন? বলতে বলতে একেবারে হেঁশেলের ভিতরেই ঢুকে পড়লেন এক মহিলা কর্মী। নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিপদ বোঝাতে এভাবেই কোচবিহারে গৃহস্থের হেঁশেলে পৌঁছচ্ছে তৃণমূল।
ইতিমধ্যেই বাড়ি বাড়ি ঘুরতে শুরু করেছেন রাজ্যের শাসক দলের নেতা-কর্মীরা। পথে নেমেছেন মহিলা তৃণমূলের কর্মীরাও। মিটিং-মিছিলের পাশাপাশি সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে লিফলেট ছড়িয়ে প্রচারও শুরু করেছে তারা। এই আইন চালু হলে কী হতে পারে সেই কথাই ওই লিফলেটের মাধ্যমে তুলে ধরছে তারা।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, “নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসি মানুষের উপকারের জন্য নয়। মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এই রাজ্যে কোনওটাই চালু হবে না। আমরা সেই কথাই বাড়ি বাড়ি বলছি।”
বিজেপিও চুপ করে বসে নেই। লিফলেট ছড়িয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ওই আইনের পক্ষে মানুষের মত তৈরি করতে রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারাও। সব ঠিকঠাক থাকলে দ্রুত লিফলেট হাতে নিয়ে বাড়ি পৌঁছবেন বিজেপি কর্মীরাও। দলের জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা বলেন, “রাজনৈতিক ফায়দার জন্য তৃণমূল এনআরসি ও সিএএ নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছে। তার বিরুদ্ধেই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে মানুষকে বোঝাব আমরা।”
অসমে এনআরসির পর থেকেই লাগোয়া কোচবিহার-সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক জায়গায় দু’পক্ষই আসরে নেমে প্রচার শুরু করে। তবে সেই দৌড়ে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে চলে যায় বিজেপি। নেতৃত্ব প্রকাশ্যেই সে কথা স্বীকার করেছেন। সেই সময় থেকেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের অপেক্ষাতেই ছিল বিজেপি। ওই আইন হলে তৃণমূল মানুষের মধ্যে যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছিল তা অনেকটাই কেটে যাবে বলে ধারণা ছিল বিজেপি নেতৃত্বের। বিশেষ করে সংখ্যাগুরু ভোটব্যাঙ্ক বিজেপির পক্ষেই যাবে বলে মনে করেন তাঁরা। নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পরে রাস্তায় নেমে মিষ্টিও বিতরণ করেন বিজেপি কর্মীরা। তবু তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন, দিন যত যাচ্ছে, সিএএ নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। শুধু সংখ্যালঘু নয়, সংখ্যাগুরুদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
তৃণমূলের জেলা মহিলা সংগঠনের জেলা সভানেত্রী শুচিস্মিতা দেবশর্মা বলেন, “ওই আইনে কেউই নিরাপদ নয়। গোটা দেশের কী অবস্থা, তা সবাই দেখছে। মানুষ তা নিয়ে প্রতিবাদ শুরু করেছে। আমরা সে কথাই মানুষের কাছে বলছি।” কোচবিহার-২ নম্বর ব্লক তৃণমূলের নেতা পরিমল বর্মণ বলেন, “আমরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে কথা বলছি মানুষের মধ্যে। সবাই বিষয়টি বুঝতে পারছেন।” বিজেপি’র কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, “এমনিতেই মানুষ তৃণমূলের কথা শুনছেন না। আমরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছনো শুরু করলে পরিস্থিতি একদমই পাল্টে যাবে।”