—প্রতীকী চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব শেষ হয়েছে। মনোনয়ন পরীক্ষার কাজও সমাপ্ত। মনোনয়ন পর্বের শেষে দক্ষিণ দিনাজপুরে দেখা গেল অনেক আসনেই বিরোধী প্রার্থী নেই। রাজ্যের নানা জায়গায় যখন বিরোধী প্রার্থীদের হুমকি, মারধর এবং মনোনয়ন প্রত্যাহারের অভিযোগে শাসকদল অভিযুক্ত, তখন দক্ষিণ দিনাজপুরের কোনও জায়গাতেই প্রকাশ্যে তৃণমূলকে বাধা দিতে দেখা যায়নি। বস্তুত, মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রথম চার দিন দক্ষিণ দিনাজপুরের কোনও মনোনয়ন কেন্দ্রেই তৃণমূলের কোনও কর্মীসমর্থককে দেখা যায়নি। শেষ দু’দিনে প্রার্থীর তালিকা জমা দেয় তৃণমূল। তাহলে বাধা না থাকা সত্ত্বেও বিরোধীরা কেন জেলার সব আসনে তাঁদের প্রার্থী দিতে পারলেন না? এই প্রশ্ন তুলে কটাক্ষ করছে শাসকশিবির। তাদের দাবি, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এমনই ছন্নছাড়া দশা যে প্রার্থীই খুঁজে পায়নি তারা। বিজেপি এবং সিপিএমের জেলা নেতৃত্বও স্বীকার করে নিয়েছে যে, সামনাসামনি তাদের কোনও বাধা দেয়নি তৃণমূল। কিন্তু তাদের অভিযোগ, চোরাগুপ্তা হুমকির পথ খোলাই রেখেছিল শাসকদল। বিরোধীরা যাতে প্রার্থী দিতে না পারে তার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে শাসকদল। তাদের পাল্টা দাবি, প্রার্থী না পেয়ে এখন অজুহাত খুঁজছে বিরোধীরা।
দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি মৃণাল সরকারের কথায়, ‘‘বিরোধীদের সংগঠন বলে কিছু নেই। জেলায় বিজেপি পঞ্চায়েত স্তরে ২০০-র উপরে সিট প্রার্থী দিতে পারেনি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘দক্ষিণ দিনাজপুরে কংগ্রেস এবং সিপিএম কিছুটা ভাল ফল করতে পারে। কিন্তু বিজেপি তাদের ধারেকাছেও যেতে পারবে না।’’
দক্ষিণ দিনাজপুরে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে মোট পঞ্চায়েতের সংখ্যা ৬৪টি। আসন ১৩০৮টি। পঞ্চায়েত সমিতি আছে আটটি। সেখানে আসন সংখ্যা ১৮৯ এবং জেলা পরিষদে রয়েছে ২১টি আসন। ভোটগ্রহণ কেন্দ্র মোট ১,২২৩ টি। বিজেপি দক্ষিণ দিনাজপুরে মোট ১,১৪৯ টি পঞ্চায়েত আসনে তাদের প্রার্থী দিতে পেরেছে। বাকি রয়ে গিয়েছে প্রায় ১৫০টি আসন। বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরীর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতিতে তো সব আসনে ১০০ শতাংশ প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে জেলা পরিষদে ১০০ শতাংশ আসনেই প্রার্থী দিয়েছি আমরা। মনোনয়ন পর্বে সে ভাবে বাধা না এলেও হরিরামপুর ব্লকের শিরসি, গোকর্ণ, গঙ্গারামপুরের এলাহাবাদ, শুকদেবপুর, অশোকগ্রাম এবং তপনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এবং কুমারগঞ্জেও বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের নেতারা আমাদের প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছেন।’’ কিন্তু বিষয়টিকে তাঁরা প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন? বিজেপি নেতা জানান, জেলাশাসককে সরাসরি বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন সে ভাবে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। স্বরূপের কথায়, ‘‘চোরাগুপ্তা এই হুমকি এবং হামলার কারণে বিজেপি সব আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। তবে ২০১৮ সাল থেকে এ বার সাংগঠনিক শক্তি যেমন বিজেপির বেড়েছে, তেমনই আসন সংখ্যাও বেড়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে ভোট না হলে এই হুমকি আরও বাড়বে এবং মানুষ নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারবে না।’’
অন্য দিকে, সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক নারায়ণ বিশ্বাসের দাবি, ভোট ঘোষণা এবং মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন খুব দ্রুত ঘোষণা হয়ে যায়। সেই কারণে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে কিছু আসনে তাঁরা প্রার্থী দিয়ে উঠতে পারেননি। এ ছাড়া শরিক দলগুলির মনোনীত প্রার্থীদের পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে ভয় দেখিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। নারায়ণের কথায়, ‘‘২০১৮ সালে হুমকি দেখিয়ে জোর করে সিপিএমকে হারানো হয়েছিল। এবার কিন্তু মানুষ রুখে দাঁড়াবে। কারণ, তৃণমূলের সর্বস্তরে দুর্নীতি মানুষ আর মেনে নিচ্ছে না। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পঞ্চায়েত স্তরে ৮৫৩ টি আসনের মধ্যে ৭৯৩টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে সিপিএম।’’
তবে তৃণমূলের দাবি, বিরোধীদের প্রার্থী দিতে না পারার মূল কারণ হল তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা। মনোনয়ন পর্বেই তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।