ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনায় এ বার রাজনীতির রং লাগল আলিপুরদুয়ারে। জেলা জুড়ে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনার জন্য বিজেপিকে দায়ী করে রাস্তায় নামার হুঁশিয়ারি দিলেন আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল নেতারা। বিজেপির পাল্টা দাবি, এটি একটি সামাজিক সমস্যা। তাকে জিইয়ে রাখতে তৃণমূল নেতারা বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছেন বলে দাবি বিজেপির।
বৃহস্পতিবার তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি মোহন শর্মা অভিযোগ করেন, জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা-সহ আলিপুরদুয়ার জেলার সবকটি গণপিটুনির ঘটনাই বিজেপির মদতে হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সর্বত্র একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে বিজেপি কৌশলে ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে দিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমরা রাজ্য নেতৃত্বকে সমস্ত ঘটনা জানিয়েছি। তাঁরা নির্দেশ দিলেই বিষয়টি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে পথে নামব।’’ বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা পাল্টা বলেন, ‘‘তৃণমূলের এ ধরনের অভিযোগ খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এ ধরনের ঘটনা রুখতে সবাইকে যেখানে মিলিতভাবে এগিয়ে আসা উচিত, তখন এ ধরনের অভিযোগ তুলে সামাজিক এই সমস্যাটাকে মোহনবাবুরা জিইয়ে রাখতে চাইছেন বলে মনে হচ্ছে। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, ওঁদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’’
জুনের গোড়াতে আলিপুরদুয়ার শহরের কাছে পাটকাপাড়া এলাকায় আচমকাই ছেলেধরা গুজব ছড়াতে শুরু করে। যার জেরে ওই মাসের মাঝামাঝি সময়ে সেখানে গণপিটুনির শিকার হন কবিরাজি ওষুধের ব্যবসায়ী এক বৃদ্ধ। ওই ঘটনার পর জেলার অন্যত্রও ছড়াতে শুরু করে ছেলেধরা গুজব। কালচিনির রায়মাটাং চা বাগান, দলসিংহপাড়া, আলিপুরদুয়ারের মাঝেরডাবরি চা বাগান ও জংশনের বাদলনগরেও ছেলেধরা গুজবে পরপর গণপিটুনির ঘটনা ঘটতে থাকে।
সোমবার জংশনের ভোলারডাবরি ও বীরপাড়ার দলগাঁও স্টেশনে অজয় বাঁসফোর নামে এক ব্যক্তিকে দু’বার গণপিটুনি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। এমনকি, তারপর বুধবার মাদারিহাটে গ্যাসের আভেন সারাইয়ের কাজে যুক্ত পূর্ব মেদিনীপুরের তিন যুবককেও ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হতে হয়। ছেলেধরার ঘটনা এ ভাবে বাড়তে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা বাড়ছে বিভিন্ন মহলে। কীভাবে মানুষকে সচেতন করে এ ধরনের ঘটনা রোখা যায় তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ কর্তারাও। তার মধ্যেই গোটা বিষয়টিতে এ বার লেগে গেল রাজনীতির রং।
সোমবার শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনে উদ্ধার হওয়া শিশুটি অজয় বাঁসফোরের কি না তা নিশ্চিত হতে তাঁর বাড়ির লোকেরা বুধবার আলিপুরদুয়ারে পৌঁছন। বৃহস্পতিবার তাঁরা যান শিলিগুড়ি জংশন আরপিএফের কাছে। সেখানকার এক আরপিএফ আধিকারিক জানিয়েছেন, আজ, শুক্রবার সমস্ত প্রমাণপত্র নিয়ে ওঁরা জলপাইগুড়ির কোরক হোমে যাবেন। এই মুহূর্তে ওই হোমেই শিশুটি রয়েছে।