দিনহাটায় গুলিবিদ্ধ এক বিজেপি কর্মী। — নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার পর্ব শেষ হতে না হতেই আবার অশান্ত কোচবিহারের দিনহাটা। বৃহস্পতিবার রাতে দিনহাটায় তিন বিজেপি কর্মীকে গুলি করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় জখম হয়েছেন আরও এক বিজেপি কর্মী। বিজেপির অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। যদিও শাসক দলের তরফে সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের বামনহাট ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কালমাটি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। ইতিমধ্যে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ। হামলা চালানোর ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক দুষ্কৃতীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।
দলীয় কর্মীদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে রাতেই দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে ছুটে যান বিজেপির কোচবিহার জেলা কমিটির সদস্য জয়দীপ ঘোষ। আহত বিজেপি কর্মীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়ার পর শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘প্রচার শেষে প্রার্থীর বাড়ির সামনে আমাদের কর্মীরা বসে ছিলেন। হঠাৎ করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বাইকে করে এসে গুলি বোমা ছুড়তে থাকে। এতে আমাদের তিন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং এক জন আহত হয়েছেন। তাঁর মাথায় চোট লেগেছে।’’ তৃণমূল যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, ‘‘এই সমস্ত ঘটনা কাঙ্ক্ষিত নয়। খুবই শান্তিপূর্ণ ভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে। দিনহাটার গীতালদহ এবং ভেটাগুড়ি ছাড়া কোনও জায়গা থেকে গন্ডগোলের খবর আসছে না। বামনহাটের অনেক বিজেপি নেতা তৃণমূলে যোগদান করেছেন। সেখানে বিজেপি প্রার্থী দেওয়া নিয়ে আগে থেকেই অনেক গন্ডগোল ছিল। যা হয়েছে একদমই ভাল হয়নি। নিজেদের স্বার্থে এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলই হোক বা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হিংসাই হোক, এই সব ঘটনাকে মারাত্মক ভাবে ঘৃণা করছি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে জেলে পুরে দেওয়া উচিত।’’
স্থানীয় বিজেপি কর্মী পীযূষ বর্মণের কথায়, ‘‘অর্জুন বর্মণ, মিলন বর্মণ এবং চন্দ্রকান্ত বর্মণ নামে আমাদের তিন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নারারণ বর্মণ নামের আরও এক কর্মী আহত হয়েছেন। প্রচার শেষে বাড়ি ফেরার আগে আমরা যখন এক জায়গায় বসেছিলাম। তখনই কয়েক জন দুষ্কৃতী বাইকে করে এসে হামলা চালায়। গুলি, বোমা ছোড়ে।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক দশটা নাগাদ স্থানীয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা প্রচার শেষে বিজেপি প্রার্থী রাজু বর্মণের বাড়ির বাইরে বসে ছিলেন। ঠিক সেই সময় এক দল দুষ্কৃতী বাইকে করে এসে আচমকা হামলা চালায়। বিজেপি কর্মীদের লক্ষ্য করে পর পর বোমা এবং গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চার জন আহত হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বাহিনী। ৪ জনকেই উদ্ধার করে দিনহাটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহতদের মধ্যে অর্জুন ও মিলনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের কোচবিহারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। অন্য দিকে, চন্দ্রকান্ত এবং নারায়ণকে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।
বৃহস্পতিবারই পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার পর্ব শেষ হয়েছে। আর সে রাতেই পর পর বোমাবাজি এবং গুলি চলার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হল কালমাটি এলাকায়। তবে এই প্রথম নয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহে একাধিক বার অশান্তি ছড়িয়েছে দিনহাটায়। গত ১৭ জুন গভীর রাতে কোচবিহারের দিনহাটায় শম্ভু দাস (২৭) নামে এক বিজেপি কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শম্ভুর বৌদি বিশাখা দাস এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে টিয়াদহের বিজেপি প্রার্থী। পাল্টা তৃণমূলের দাবি ছিল, ঘরোয়া বিবাদ বা শরিকি দ্বন্দ্বের মতো কারণে খুন হয়ে থাকতে পারেন শম্ভু। এর পর গত ২৭ জুন দিনহাটায় আরও এক জন নিহত হন। স্থানীয় সূত্রে খবর, গীতালদহ-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের জারিধরলায় এলাকায় তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে এক তৃণমূল সমর্থক প্রাণ হারান। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম বাবু হক (৩৪)। অভিযোগ, তাঁকে গুলি করে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতী এনে পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালানোর অভিযোগ তোলে শাসক দল। প্রশ্ন তোলা হয় বিএসএফের ভূমিকা নিয়েও। পাল্টা বিজেপি দাবি করে, ওই ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক দাবি করেন, নিহত বাংলাদেশের নাগরিক এবং তিনি আদতে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধী’ ছিলেন! বৃহস্পতিবারই বাবু খুনের ঘটনায় বাংলাদেশ থেকে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারির পর বাংলাদেশের বিজিবি তাঁদের বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। তার পর আবার বৃহস্পতিবার রাতে অশান্ত হয়ে ওঠে দিনহাটার কালমাটি এলাকা।