ব্যস্ততা: মাঠে ধান কাটার কাজ করছে অষ্টম শ্রেণির মাদ্রাসা ছাত্র দুই ভাই তহিদুর আলি ও হাসিম সেখ। পুরাতন মালদহে বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
লকডাউনের সময় থেকে দিনমজুর বাবার কাজ কমে গিয়েছিল। ফলে, টান পড়ে সাতজনের সংসারে। সে সময় বিনে পয়সার রেশনের চালই ছিল ভরসা। শেষ পর্যন্ত লকডাউনের পর সংসারের হাল সামাল দিতে দুই ভাই নেমে পড়েছিল দিনমজুরের কাজে। সেই থেকে দিনমজুরের কাজ করে চলেছে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ওই দুই ভাই। পুরাতন মালদহের ছোট সুজাপুরের তহিদুর আলি ও হাসিম সেখ, ওসমানিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্র। মাদ্রাসা খুললেও অষ্টম শ্রেণির পঠন-পাঠন এখনও চালু হয়নি। তাই পাশের গ্রাম মাধাইপুরে অন্যের জমির পাকা ধান কাটতে এখন ব্যস্ত তহিদুর ও হাসিম। ৪০০ টাকা মজুরিতে বৃহস্পতিবারও দিনভর দুই ভাই ধান কেটেছে বলে জানাল।
পুরাতন মালদহের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোট সুজাপুরের বাসিন্দা দিনমজুর বারেক আলি। স্ত্রী সাদিকা বিবি ঘর সামলাচ্ছেন। তাঁদের ছয় সন্তান। তিন মেয়ের মধ্যে বড় এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তিন ছেলের মধ্যে বড় তহিদুর ও মেজ হাসিম। অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে সংসার চলে বারেকের। বারেক বললেন, ‘‘লকডাউনের শুরু থেকে চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়ি। রেশনের চাল ছিল ভরসা। লকডাউনের পরে সামান্য যে কাজ মিলছিল তাতে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছিল। বাধ্য হয়েই দুই ছেলে আমার সঙ্গে দিনমজুরের কাজ শুরু করে। এখনও মাদ্রাসা খোলেনি। তাই কাজ করে চলেছে দুই ছেলে।’’ ছেলে তহিদুর বলে, ‘‘বাবার একার রোজগারে সংসার চলছিল না। এ দিকে মাদ্রাসাও বন্ধ। ফলে ঘরে বসে না থেকে আমরা দুই ভাই দিনমজুরি করা শুরু করি।’’
তারা জানাল, এখন পাশের গ্রাম মাধাইপুরে বিঘার পর বিঘা জমিতে ধান পেকেছে। ৪০০ টাকা মজুরিতে রোজ ধান কাটার কাজ মিলছে। আপাতত সেই কাজ করে সংসারের সুরাহা হচ্ছে। তবে পড়াশোনা বন্ধ করবে না। আরও পড়বে ওরা। হাসিম বলল, ‘‘তবে মাদ্রাসা খুললে দিনমজুরের কাজ বন্ধ করে অবশ্যই ক্লাসে যাব। তখন সংসার চালাতে হয়তো বাবার কষ্ট হবে। কিন্তু আমরা তো পড়াশোনা করেই এগিয়ে
যেতে চাই।’’