লকডাউন: সন্ধে ৭ টা। এক সময়ে যানজটে নড়ার জো ছিল না এই সব রাস্তায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বরূপ সরকার
এ যেন এক অন্য শহরের ছবি! প্রথমে লকডাউন আর এখন আনলক-১। করোনার সঙ্গে যেন বদলে গিয়েছে শহর শিলিগুড়ি। সকাল ১০টা বা রাত ৮টায় যে হিলকার্ট রোড, সেবক রোড বা বিধান রোডে পা ফেলার জায়গা মিলত না, তা আজ অনেকটাই সুনসান। যানজট নেই, ট্রাফিক সিগনাল ভাঙা নেই, নেই গাড়ি-বাসের সারি বা অটোর ওভারটেকের প্রতিযোগিতা।
লকডাউনের জেরে দিনপনেরো আগেও শহরের বহু জায়গায় ট্রাফিক সিগন্যাল পর্যন্ত চালাতে হয়নি। রাস্তায় লোকজন নামলেও তা শিলিগুড়ির চেনা ছবির চেয়ে অনেক কম। তাই ট্রাফিক পুলিশের ঘাম ঝরিয়ে দৌড়ঝাঁপের ছবিটাও নেই। যানজট নগরীর তকমাটাই যেন বদলে গিয়েছে শিলিগুড়ির।
১ জুন থেকে শুরু হয়েছে লকডাউনের মধ্যে নানা ছাড়। ৮ জুন থেকে তা বেড়েছে। অফিসে ৭০ শতাংশ হাজিরা থেকে খুলে গিয়েছে উপাসনাস্থলও। বাজারহাট, মার্কেট কমপ্লেক্স, শপিং মল— সব খোলা। খুলেছে হোটেল, রেস্তরাঁও। কিন্তু নেই সেই পুরনো ছবি। রাস্তায় নেই লোক।
বৃহস্পতিবার সন্ধে ৭টা। হিলকার্ট রোডের গুরুংবস্তি মোড়, মহাত্মা গাঁধী মোড় বা জংশন-মাল্লাগুড়ি এলাকা। হঠাৎ মনে হতে পারে, রাত ১২টা বেজে গিয়েছে। হাতেগোনো টোটো-অটো বা দূরপাল্লার কিছু গাড়ি। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহেও সন্ধে ৭টায় এই সব এলাকায় সিগন্যালে দু’তিন মিনিট না দাঁড়িয়ে এগোনার কথা ভাবাই যেত না।
শিলিগুড়ি শহরে ট্রাফিক সিগন্যাল চালু হয়ে যায় সকাল ৮টা থেকে। চলে রাত ৯টা অবধি। সেখানে সিগন্যালের ব্যবহার দু’মাস প্রায় বন্ধই ছিল। তিন মাস আগেও সকাল-সন্ধ্যায় পানিট্যাঙ্কি মোড়, বিধান রোডে ধাক্কাধাক্কির পরিস্থিতি তৈরি হত। অফিস, দোকান, শোরুম, হোটেল, পেট্রোল পাম্পের সামনে মানুষের সারি আর গাড়ি দেখা যেত। পানিট্যাঙ্কি মোড়ের ঘড়িটা বেজে গেলেও শোনার লোকের অভাব এখন। হিমেশ রায়, ননীগোপাল ভট্টাচার্যের মতো বাসিন্দারা জানান, করোনার আতঙ্কে জরুরি দরকার ছাড়া কেউ বার হচ্ছেন না। মল, বাজার খোলা থাকলেও প্রায় ফাঁকাই।
তবে, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদল হবে বলেই মনে করছেন শিলিগুড়ি ট্রাফিক পুলিশের এডিসিপি জসপ্রীত সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘ট্রাফিক হালকা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা ধীরে হলেও বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।’’ তিনি জানান, ট্রাফিক পুলিশের কিছু কর্মীকে করোনা মোকাবিলার কাজে যুক্ত করা হয়েছিল। তাঁদের আবার ধাপে ধাপে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।