Coronavirus

কয়লার ধাক্কায় কি চায়ে বিপদ    

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনীতিকে চাগিয়ে তোলার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২০ ০৬:৪৯
Share:

প্রতীকী ছবি

শনিবার বিকেলে নয়াদিল্লিতে তখনও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠক চলছে। ডুয়ার্সের চা বাগান ম্যানেজারদের মোবাইলে একটি বার্তা চালাচালি শুরু হয়ে গিয়েছে ততক্ষণে। আসলে সেটি ছোট্ট একটি প্রশ্ন— ‘এ বার থেকে কি লাভের টাকা কয়লা-তে যাবে?’

Advertisement

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনীতিকে চাগিয়ে তোলার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। সেই প্যাকেজের খুটিনাটি রোজ সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। শনিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ব্যাখ্যা দেওয়ার পরে কয়লা নিয়ে প্রশ্নের মুখে চা শিল্প। ডুয়ার্স-তরাই-দার্জিলিঙের চা কারখানাগুলি কয়লার ওপরে নির্ভরশীল। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, কয়লা ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ হবে। ঘোষণা শোনা মাত্রই কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে চা শিল্প। এমনিতেই লকডাউন চায়ের ফার্স্ট ফ্লাশের উৎপাদন ব্যাপক কমিয়ে দিয়েছে। বিদেশে রফতানির দরজাও বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে কয়লার দাম বেড়ে গেলে চা শিল্পের লাভের মুখটুকু দেখার শেষ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, লকডাউনে বিপর্যস্ত অর্থনীতির মোকাবিলা করতে সাধারণ মানুষের হাতে নগদ অর্থের জোগান দিতে হবে। শনিবারের ঘোষণায় কয়লার বেসরকারিকরণ ছাড়াও বিমানবন্দর বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে বেসরকারি লগ্নি, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিদ্যুৎ সংস্থায় বিলগ্নিকরণ এবং বেসরকারি পুঁজির হাতে নতুন জমির বন্দোবস্তের ঘোষণা করেছেন। উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির শিক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, এই ঘোষণাগুলির কোনটি সাধারণ মধ্যবিত্তের হাতে নগদের জোগান বাড়াবে, কোনটিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে? জলপাইগুড়ি জেলার চেম্বার অব কর্মাসের সম্পাদক অভ্র বসু বলেন, “শনিবার যেসব সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে, সেগুলি সবই প্রথমসারির শিল্পপতিদের সাহায্য করবে। শহুরে অর্থনীতিতে, মানে সাধারণ মধ্যবিত্তদের মধ্যে সেইসব সুবিধে পৌঁছবে না। করোনা পরিস্থিতিতে সাহায্যের নামে বিলগ্নিকরণই বেশি শোনা যাচ্ছে।”

Advertisement

উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ হল চা। শুক্রবার রাতেই টি বোর্ড সরকারি ভাবে জানিয়েছে, চা শিল্পে গত দু’মাসে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ শতাংশের মতো ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কয়লায় বেসরকারিকরণের ঘোষণায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। চা পাতা শুকানো থেকে শুরু করে কারখানার দুই-তৃতীয়াংশ কাজেই কয়লা দরকার। চা বাগানগুলিতে কয়লার একাধিক গুদাম থাকে। কয়লার দাম বাড়লে তার সরাসরি প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, “বেসরকারি হাতে গেলে কয়লার দাম বাড়বেই। চা শিল্প কোথা থেকে কয়লা কেনে, তা তো সরকার দেখে না। তাই আমাদের বেশি দামেই কয়লা কিনতে হবে। ফলে চা বাণিজ্যে ফের ধাক্কা লাগবে। যার প্রভাব সরাসরি কয়েক লক্ষ লোকের উপরে পড়বে।” বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর যুক্তি, “সবে তো ঘোষণা হল। এখনই আশঙ্কা না করে অপেক্ষা করে দেখাই যাক!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement