নববধূর কাছে মৃত্যুর খবর লুকিয়ে রাখার চেষ্টা। নিজস্ব চিত্র।
বৌভাতের রাতেই পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কনের আত্মীয়স্বজনদের। তারপরেও নববধূকে শুধু আগলে রাখাই নয় তাঁকে আত্মীয়দের মৃত্যুর খবর পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। নববধূ যাতে দুর্ঘটনায় আত্মীয়দের মৃত্যুর খবর জানতে না পারেন তারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বরের বাড়ির সবাই মিলে।
ধূপগুড়ির ময়নাতলি এলাকায় মঙ্গলবার রাতে ৩টি গাড়ি পাথর বোঝাই এক লরির সঙ্গে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা সবাই নববধূর আত্মীয়। নববধূর খুড়তুতো বোনের বর এবং তাঁর ২ সন্তান এই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। এ ছাড়া বাকিরা সব দূরসম্পর্কের আত্মীয়স্বজন। বরের বাড়ির সবাই মিলে নববধূকে জানিয়েছেন ছোট একটি পথ দুর্ঘটনা হয়েছে তাতে কয়েক জন আহত হয়েছেন।
মৃত্যুর খবর নববধূর কাছে লুকিয়ে রাখতে বিয়ের পরের রীতিতেও কিছু বদল ঘটিয়েছেন বরের বাড়ির সদস্যরা। রীতি অনুযায়ী বিয়ের পর ২ দিনের জন্য বাবার বাড়ি যান নববধূরা। কিন্তু এখানে নববধূকে শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা বলেছেন, “আমাদের বংশের নিয়ম বাড়ির বিবাহিত কোনও মেয়ের বাড়িতেই যায় নব দম্পতি।” সেই মতো নববধূ যেতে চলেছেন বরের দিদির বাড়িতে।
নববধূর শ্বশুর সুতেশ রায় বলেন, “বৌমাকে বলা হয়েছে ছোট দুর্ঘটনা ঘটেছে। বৌমা রোজ তাঁর বাবা মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। আমরাও তাঁদের বাড়িতে গিয়েছি। তবে ছেলে বৌমাকে আমার মেয়ের বাড়িতে পাঠাব।” বরের কাকা সুনীল রায় বলেন, “বৌভাতের দিন এত বড় দুর্ঘটনা হয়ে গেল যে আমরাই স্বাভাবিক ভাবে কোনও কাজ করতে পারছি না। আর বৌমা তো এই বাড়িতে নতুন। তাই সবাই মিলে তাঁকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করছি।”
নতুন বর বিকাশ জানিয়েছেন, বাড়িতে কেউ এলে আগে তাঁকে বাইরে বসিয়ে গোটা বিষয়টি বোঝানো হচ্ছে যাতে নববধূকে তিনি কিছু জানিয়ে না ফেলেন। এমন কি নিজেরাও গোটা বিষয় নিয়ে কোনও আলোচনা করছেন না।
এই দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে ৫ জন ওদলাবাড়ির বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার সেই মৃতদের পরিবারের হাতে আড়াই লাখ টাকা করে চেক তুলে দেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতারা।