দক্ষিণ শিবরামপুর সীমান্ত পরিদর্শনে বিএসএফের আধিকারিকেরা। শনিবার বালুরঘাটে। ছবি: অমিত মোহান্ত।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে অস্বস্তির আবহ কাটল না শনিবারেও। শুক্রবার কোচবিহারের তিন বিঘা সীমান্তের পাশাপাশি, দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের দক্ষিণ শিবরামপুর সীমান্তেও বেড়া বসানোকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। মালদহের সুকদেবপুর, কোচবিহারের তিন বিঘার মতো সেখানেও বেড়া বসানোয় বাধা দেওয়ায় অভিযুক্ত ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি)। তিন বিঘা এবং বালুরঘাটের সীমান্তে থমথমে পরিস্থিতি ছিল এ দিন। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কর্তারা পরিস্থিতি নজরে রেখেছেন।
সীমান্তে বেড়া দেওয়া নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত সুকদেবপুরে। সেখানকার উন্মুক্ত সীমান্তে ভারতীয় ভূখণ্ডে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ এ দিনও হয়নি। কোচবিহারে মেখলিগঞ্জের তিন বিঘা করিডরের কাছে দহগ্রাম-আঙ্গারপোতার বাংলাদেশ সীমান্তেও এ দিন বেড়া দেওয়া বন্ধ ছিল। সেখানে এ দিন দেখা যায়, জ়িরো পয়েন্টের ও পারে গর্ত খুঁড়ে বন্দুক হাতে ‘পজ়িশন’ নিয়ে রয়েছে বিজিবি। জ়িরো পয়েন্টের দিকে এগোতে গেলেই বাধা দিচ্ছেন বিএসএফ জওয়ানেরা। সীমান্তের দিকে এগোতে দেওয়া তো দূর, বেশি ক্ষণ দাঁড়াতেও দিচ্ছে না বিএসএফ। সূত্রের দাবি, অন্য দিন সেখানে যত সংখ্যায় থাকে, তার চেয়ে বেশি বিজিবি মোতায়েন রয়েছে ওই এলাকায়। তাই কড়াকড়ি।
যদিও ওই সীমান্তের ভারতীয় ভূখণ্ডের চাষিরা বেড়া দেওয়ার দাবিতে অনড়। তাঁদের দাবি, আরও অন্তত চার কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতার নেই। আজ, রবিবার অথবা এক-দু'দিনের মধ্যে ওই অংশেও বেড়া দেবেন তাঁরা। স্থানীয় কৃষিজীবী উপানন্দ রায়, বাপ্পা রায়েরা বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরা এসে আমাদের জমির ফসল নষ্ট করে। যতই বাধা আসুক, বেড়া দেবই।"
আইজি (উত্তরবঙ্গ) সূর্যকান্ত শর্মা নিয়মিত তিন বিঘা সীমান্তের খবর নিচ্ছেন বলে দাবি বিএসএফ সূত্রের। বিএসএফের জলপাইগুড়ি সেক্টরের ডিআইজি ব্রিগেডিয়ার রাজীব গৌতম শুক্রবার রাতভর সীমান্তে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় তদারকি করে, এ দিন সকাল নাগাদ এলাকা ছাড়েন। এ দিন একাধিক বিএসএফ কর্তা ওই সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন। এক বিএসএফ কর্তা বলেন, "বিজিবির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। কোনও ভাবে যাতে সীমান্তে উত্তেজনা না ছড়ায়, তা নিয়ে সহমত সবাই।’’
রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা শনিবার বলেন, “বাংলাদেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে তাতে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। দুই দেশই বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চালাচ্ছে। আমরা দ্রুত শান্তি ফিরে আসার পক্ষে।” তিনি আশা প্রকাশ করেছেন দ্রুত সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে ও সব সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে থাকবেন। একই সঙ্গেশিল্পমন্ত্রী জানান, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে দু’দেশইকাঁটাতার লাগাতে বাধ্য। বিষয়টি নিশ্চিত কেন্দ্র দেখছে।
বেড়া দেওয়া নিয়ে শুক্রবার উত্তেজনা ছড়িয়েছিল বালুরঘাটের দক্ষিণ শিবরামপুর সীমান্তেও। সেখানে প্রায় ৭০০ মিটার এলাকায় কাঁটাতার নেই। শুক্রবার বিএসএফ ওই এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দিতে যন্ত্র ব্যবহার করতে গেলে, বিজিবি বাধা দেয় বলে অভিযোগ। দু’পক্ষই অস্ত্র উঁচিয়ে ‘পজ়িশন’ নেয়। এ দিন সেখানে কাজ হয়নি। তবে জ়িরো পয়েন্টে দুপক্ষে শান্তি বৈঠক হয়েছে।
এরই মধ্যে এ দিন রাজ্যের মালদহের কালিয়াচকের নওদা সীমান্ত এবং মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির ফরাজিপাড়া সীমান্তে চোরাচালানকারীরা বিএসএফ জওয়ানদের আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। দু’টি ক্ষেত্রেই গুলি চালিয়ে তাদের প্রতিহত করে বিএসএফ।