তিস্তা নদী। নিজস্ব চিত্র।
‘রেমাল’-এর প্রভাবে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি হয়েছিল উত্তরবঙ্গে। সে প্রভাবেই সিকিমের বৃষ্টিতে ফুঁসে উঠল তিস্তা নদী। গত বছর সিকিমের হ্রদ বিপর্যয়ে গতিপথ বদলেছিল তিস্তা। তার জেরে, এ বার বর্ষার আগে নদীতে জল বাড়তেই নতুন কয়েকটি এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সেবকের কাছে লালটং বস্তি এলাকা। তিস্তায় জল বেড়ে যাওয়ায় ব্যারাজ থেকেও জল ছাড়তে হয়েছে। বুধবার সকালে প্রথমে কালীঝোরা থেকে জল ছাড়া হয়। তার পরে খুলে দেওয়া হয় গজলডোবা ব্যারাজের কয়েকটি লকগেটও। সব মিলিয়ে দুই হাজার কিউমেক জল ছাড়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের তরফে তিস্তা নদীতে সব রকমের কাজকর্ম— নৌকায় নদীতে মাছ ধরা থেকে স্নানে নিষেধ করা হয়েছে। তিস্তার চরে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতিও চলছে। সেচ দফতরের মুখ্য বাস্তুকার (উত্তর-পূর্ব) কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, “তিস্তা নদী যে সব এলাকায় গতি বদলেছে, সেখানে এ বার খানিকটা জল বাড়তেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা প্রস্তুত ছিলাম। কয়েকটি এলাকায় বন্যা প্রতিরোধের কাজ চলছে সেগুলিও দ্রুত শেষ হবে।”
তিস্তা নদী গতিপথ বদলানোয় নতুন নতুন এলাকায় বর্ষার সময়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে অনুমান করেছিল সেচ দফতর। দেখা গেল, বর্ষার আগেই জল বেড়ে লালটং বস্তি থেকে টোটোগাঁও, মিলনপল্লি লাগোয়া এলাকা, ময়নাগুড়ির বাকালি, মেখলিগঞ্জের প্রেমগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই এলাকাগুলিতে প্রশাসনের তরফে মাইকে সতর্কবার্তা ঘোষণা চলছে। সেচ দফতরের দাবি, এর পরে জল আরও বাড়লে, তিস্তা নদীর একাধিক এলাকায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
মঙ্গলবার রাতে জলপাইগুড়িতেও প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। ঘন ঘন বাজ পড়েছে। সিকিমে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি চলছিলই। পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি হওয়ায় তিস্তার জল বাড়তে শুরু করে। বুধবার সকাল থেকে হুড়মুড়িয়ে জল নামতে থাকে। যার জেরেই ব্যারাজ থেকেও জল ছাড়া শুরু হয়। সেচ দফতরের একটি সূত্রের দাবি, ভুটানেও বৃষ্টি হয়েছে। সে জলও আসতে শুরু করেছে উত্তরবঙ্গের নদীগুলিতে।
বর্ষা আসার আগেই ভারী বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে জলপাইগুড়িতে। এরই মাঝে সেচ দফতরের উদ্বেগ বাড়িয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর এ দিন বিকেলে বিশেষ বুলেটিনে জানিয়েছে, আগামী দু’দিন জলপাইগুড়িতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি
হবে। তাই জারি হয়েছে ‘কমলা সতর্কতা’।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমের মুখপাত্র গোপীনাথ রাহা বলেন, “বাতাসের উপরিভাগে নতুন করে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে। তার জেরেই ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে।”