জলপাইগুড়ির জেলা পরিষদ সভাগৃহে তিস্তা নদীকে বাঁচাতে গণ কনভেনশন। — নিজস্ব চিত্র।
তিস্তা নদীকে বাঁচাতে জলপাইগুড়িতে একটি নাগরিক কনভেনশনের আয়োজন করা হয়৷ জেলা পরিষদ সভাগৃহে ‘বিপন্ন তিস্তা’ (সেভ দ্য তিস্তা) প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পবনকুমার বনসল, সমাজকর্মী মেধা পাটকার, ‘এফেক্টেড সিটিজ়েনস অফ তিস্তা’-র সাধারণ সম্পাদক গিয়াৎস লেপচা, নদী বাঁচাও আন্দোলনের তাপস দাস, প্রাক্তন বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়-সহ অন্যান্যেরা।
মেধা নিজের বক্তব্যে বৃহত্তর পরিবেশ, নদী, জীবিকা বাঁচানোর প্রেক্ষিতে তিস্তা নদীকে বাঁচানোর জন্য গণ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। গিয়াৎস তিস্তার উপর একের পর এক বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে সিকিমের গ্রামীণ সমাজ ও সাধারণ মানুষের বর্তমান পরিস্থিতির বর্ণনা করেন। বনসলের কথায় উঠে আসে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা জল বণ্টন এবং সামগ্রিক জলের রাজনীতির কথা। একেবারে শুরুতে কনভেনশনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক রূপক পাল। দেখানো হয় গঙ্গা ভাঙন নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও।
আয়োজকদের পক্ষে অমর্ত্য রায় বলেন, ‘‘তিস্তাকে কেন্দ্র করে কনভেনশনের আয়োজন করার একমাত্র উদ্দেশ্য, এই নদীকে বাঁচিয়ে রাখা। তা হলে আমরাও বাঁচব। আমাদের এই মুহূর্তের লক্ষ্য, তিস্তার সমস্যাগুলিকে দিল্লি এবং কলকাতায় দফতরগুলিকে জানান দেওয়া৷ কনভেনশনের মাধ্যমে ওঠা দাবি ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়া এবং এই লক্ষ্যে জনমত গঠন করা।’’
আলোচনায় উঠে আসে তিস্তাকে কেন্দ্র করে বাঁধ তৈরি হওয়া, গাজলডোবার তিস্তা প্রকল্পের কথা এবং এর ফলে সমতলে বাড়ছে জলকষ্ট। এক দিকে বাঁধ তৈরি করে সিকিম নিজের পরিবেশ ঠিক রেখে জলবিদ্যুৎ অন্যত্র বিক্রি করছে, অন্য দিকে, গজলডোবার ব্যারেজের ফলে নদীর সাধারণ গতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সাহিত্যিক দেবেশ রায় তাঁর ‘তিস্তা পারের বৃত্তান্ত’ উপন্যাসে লিখেছিলেন, প্রাণোচ্ছ্বল তিস্তাকে সম্বল করে দীর্ঘ গতিপথ বরাবর বেড়ে ওঠা নাগরিকতার অনন্য কাহিনি। কিন্তু দিনে দিনে অবক্ষয়ের থাবা এসে পড়েছে সেই তিস্তাতেও। উন্নয়নের ঠেলায় প্রাণ ওষ্ঠাগত উত্তরবঙ্গ এবং বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এই নদীর। তিস্তাকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে দিতে তাই জলপাইগুড়ি থেকেই শুরু হল নাগরিক আন্দোলনের।