বৃষ্টিতে খুশি চা বাগান। ছাতা মাথায় দিয়ে চলছে পাতা তোলার কাজ। জলপাইগুড়ির একটি বাগানে। ছবি: সন্দীপ পাল।
যদি বরষে আশ্বিনের শেষ, ধন্য তবে চায়ের দেশ? আপাতত এই প্রশ্নই ঘুরছে উত্তরের চা মহল্লায়। চলতি বছরের গোড়া থেকেই মরসুম চায়ের জন্য ‘কষ্টকর’। গ্রীষ্মকালে তেমন গরম পড়েনি, বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়নি, শীতকালেও তাপমাত্রার ওঠানামা স্বাভাবিক ছিল না। প্রথম এবং দ্বিতীয় ফ্লাশের চা উৎপাদন মার খেয়েছে আবহাওয়ার কারণে। ‘মনসুন ফ্লাশ’ তথা বর্ষার সময়ের পাতা তোলা চলছে। তাতেও পাতার পরিমাণ কম বলে দাবি। শরৎ কালের বৃষ্টিতে এ বার ‘অটাম ফ্লাশ’ অর্থাৎ, শরৎকালীন পাতার মান ভাল হবে বলে আশায়
চা মহল্লা।
চা বাগান কর্মীদের দাবি, বর্ষার শেষ দিকে বৃষ্টি হয়নি। আশ্বিনের গোড়াতেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দিন কয়েক ধরে কখনও তুমুল, কখনও ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি চলছে। বর্ষার শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় চা গাছের গোড়া শুকিয়ে গিয়েছিল, পাতার উপরে ধুলোর আস্তরণ পড়েছিল। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ধুলো সরে চা পাতার সবুজ ফিরে এসেছে। চা বাগান পরিচালকদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন’-এর ডুয়ার্স শাখার চেয়ারম্যান জীবনচন্দ্র পান্ডে বলেন, ‘‘বৃষ্টি পেয়ে চা পাতার বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি হবে। চা পাতার মান ভাল হবে। চা পাতার স্বাদও বাড়বে।’’
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আগামী কয়েক দিন উত্তরবঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এই তিন জেলাতেই বৃষ্টি চলছে। এই তিন জেলাই উত্তরের ‘চা মহল্লা’ বলে পরিচিত। বৃষ্টির ফলে, চা বাগানে আপাতত খুশির হাসি৷ শরৎ কালের চা পাতা চা-রসিকদের কাছে মূলত রঙের কারণে বিখ্যাত। শরৎ কালে তোলা এবং তৈরি হওয়া চা পাতা গরম
জলে ফেললেই চায়ের রং ছড়াতে থাকে। চলতে থাকা বৃষ্টিতে শরৎ কালের চা পাতার উৎপাদনও বাড়বে বলে আশায় রয়েছেন চা পরিচালকরা। ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘সিস্টা’-র কার্যকরী সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ বছর গোড়া থেকেই আবহাওয়া প্রতিকূল। শরৎ কালের বৃষ্টি চায়ের জন্য অত্যন্ত ভাল খবর।’’
উৎপাদন কম, তার সঙ্গে মান ভাল না হওয়ায়, চা পাতা এ বছর দামও কম পেয়েছে গোড়ার দিকে। চা শ্রমিকদের বোনাস নিয়ে চুক্তি চলছে। এখনও জটিলতা কাটার লক্ষণ নেই। এই পরিস্থিতিতে অসময়ের বৃষ্টি সুখবর এনেছে চা বাগানে।