Kolkata Bus Services

সরকারের কাজ

ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার জন্য প্রথম কর্তব্য ছিল বাসের যথাযথ ভাড়া নির্ধারণ। এমনিতেই প্রশ্নটি চরিত্রে রাজনৈতিক— এবং, নেতারা তাকে নিজেদের স্বার্থে রাজনৈতিকতর করে তুলেছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:৫০
Share:

একুশ শতকের প্রথম দশক অবধি কলকাতাবাসী নির্দ্বিধায় দাবি করতে পারতেন, অনেক জিনিসে পিছিয়ে থাকলেও গণ পরিবহণের ক্ষেত্রে গোটা দেশে এই শহরের জুড়ি নেই। দাবিটি ভিত্তিহীন ছিল না। এবং, তার একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল বাস— বেসরকারি, এবং সরকারি বাস। কালেদিনে সেই গর্বটি হাতছাড়া হল তো বটেই, ইদানীং শহরের বাস অন্য শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাসমালিকদের বৈঠকে ডেকে পুলিশকে বোঝাতে হচ্ছে যে, বাসে-বাসে রেষারেষি কী ভাবে মারাত্মক হয়ে উঠছে। তার জন্য বাসকর্মীদের কমিশন প্রথা বন্ধ করার প্রস্তাবও উঠেছে। অন্য দিকে, শহরের রাস্তায় বাস কমেছে; রাতের দিকে বিভিন্ন রুটে আর বাসের দেখাই মেলে না, তখন খরচসাপেক্ষ অটো বা শেয়ার ট্যাক্সিই ভরসা। এই পরিস্থিতিতে একটি রব উঠেছে— শহরের পথ থেকে সরকারি বাস কার্যত উঠে যাওয়ার ফলেই নাকি এই দুরবস্থা। একদা সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে চালানোর জন্য যে বাসগুলি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলিও আর পথে নামে না। গোড়াতেই একটা কথা স্পষ্ট বলা প্রয়োজন— বাস চালানো সরকারের কাজ নয়। সেই প্রথাটি ছিল সমাজতান্ত্রিক ভাবনার ভূত— ১৯৯১ সালে ‘সমাজের সমাজতান্ত্রিক কাঠামো’-র ধারণাটি বিদায় হলেও তার ভূত সমাজের ঘাড় থেকে সম্পূর্ণ নামেনি। কোনও গোত্রের ব্যবসাই সরকারের কাজ হতে পারে না, পরিবহণের ব্যবসাও নয়। অন্য ক্ষেত্রগুলির মতোই এই ক্ষেত্রেও সরকারের একমাত্র কর্তব্য, ক্ষেত্রটিতে যাতে বাধাহীন মসৃণ ভাবে ব্যবসা চলতে পারে, তা নিশ্চিত করা। কলকাতার গণপরিবহণের ক্ষেত্রে সব সরকারই সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। পথের সঙ্কটের মূল কারণ সেটাই, রাজপথে সরকারি বাসের অভাব নয়।

Advertisement

ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার জন্য প্রথম কর্তব্য ছিল বাসের যথাযথ ভাড়া নির্ধারণ। এমনিতেই প্রশ্নটি চরিত্রে রাজনৈতিক— এবং, নেতারা তাকে নিজেদের স্বার্থে রাজনৈতিকতর করে তুলেছেন। ফলে, তেলের দাম যতই বাড়ুক, বাস-ট্যাক্সির ভাড়া বাড়তে চায় না। তার ফলে অনেকে পথে গাড়ি নামানো বন্ধ করেছেন, এবং বাকিরা অবৈধ ভাবে বাড়তি ভাড়া তুলছেন। কাটা রুট, বেশি ভাড়া, ট্যাক্সির মিটারে না-চলা— সবই ঘটছে। এবং, বাসভাড়া দু’টাকা না বাড়িয়ে নেতারা যে জনগণের স্বার্থরক্ষার ভান করছেন, সেই সাধারণ মানুষকে নিত্যদিন বহু টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সরকার গরিব মানুষের স্বার্থরক্ষা করতে চাইলে তাঁদের বাসভাড়া বাবদ প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরও করতে পারে— সে পদ্ধতি সরকারের বিলক্ষণ জানা— কিন্তু, গোটা পরিবহণ ব্যবস্থাকে অকেজো করে দেওয়া চলে না। অবস্থাপন্নদের জন্য অধিকতর ভাড়ার কিন্তু আরামদায়ক বাস পথে নামানোর ক্ষেত্রেও আরও উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে। এবং, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বাস চলাচলের জন্য রাস্তার ব্যবস্থা করা। কলকাতায় জনসংখ্যা ও গাড়ির সংখ্যার অনুপাতে রাস্তার পরিমাপ বিসদৃশ রকম কম। ফলে, শহরের প্রাণকেন্দ্রে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ না করলে গণপরিবহণের জন্য যথেষ্ট জায়গা বার করা অসম্ভব। সরকারকে সেই কাজটিও করতে হবে। এই ব্যবস্থাগুলি করার পর দেখা কর্তব্য যে, প্রত্যেকে নিয়ম মেনে যথাযথ পরিষেবা দিচ্ছেন কি না। অনিয়মের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তিরও ব্যবস্থা করতে হবে। গণপরিবহণ রক্ষার এটাই একমাত্র পথ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement