প্রতীকী চিত্র
রাজ্যের চা বাগিচার শ্রমিকদের পুজোর বোনাস নিয়ে প্রথম বৈঠক থেকে কোনও ফলাফল সামনে এল না। মঙ্গলবার প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে এই বৈঠক চলে। সেখানে ডান-বাম সব শ্রমিক সংগঠনই ২০ শতাংশ হারে বোনাসের দাবিতে অনড় ছিল। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির জন্য কলকাতা, শিলিগুড়ি ও মালবাজার মিলিয়ে ভার্চুয়াল ভিডিয়ো বৈঠক হয়। কোনও ফলাফল না আসায় ঠিক হয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফার বৈঠক হবে। দুই পক্ষের আশা, এ বার দ্রুত বোনাস নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
মালিকপক্ষের সংগঠন দ্য কনসালটেটিভ কমিটি অব প্ল্যান্টেশন অ্যাসোসিয়েশনের (সিসিপিএ) সেক্রেটারি জেনারেল অরিজিত রাহা সমস্ত সংগঠনকে নমনীয় মনোভাব এবং বাস্তব পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা চাইছি সবাই মিলে বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে গিয়ে নিষ্পত্তি করতে। এই সময় গেট মিটিং, আন্দোলন না হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।’’
রাজ্যে তৃণমূলের সরকার আসার পর ২০১১-২০১৬ সাল অবধি চা শ্রমিকেরা পুজোয় ২০ শতাংশ হারে বোনাস পেয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে বোনাসের হার কমতে শুরু করে। গত বছর ১৮.৫০ শতাংশ হারে বোনাস হয়। পাহাড়ে বরাবর বোনাস চুক্তি আলাদা হয়েছে। গতবার ২০ শতাংশ হারে বোনাস হলেও তা ১২ শতাংশ এবং ৮ শতাংশ হারে দেওয়ার কথা ঠিক হয়েছিল। সেই পরের ৮ শতাংশ এখনও বেশ কিছু বাগানের শ্রমিকেরা পাননি বলে অভিযোগ।
সেই হিসেবে এদিন প্রথম থেকে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন, বিভিন্ন বামপন্থী-ডানপন্থী সংগঠনের যৌথ মঞ্চ, বিজেপির শ্রমিক সংগনের নেতারা সকলেই ২০ শতাংশ হারে বোনাসের দাবি জানান। তাঁরা জানান, মার্চ থেকে তিন মাস বাগান খারাপ ছিল। তার পর থেকে বাজার ভালই রয়েছে। কাঁচা পাতা ৪০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে। মেড-টি বা তৈরি চা ২৫০ টাকা কেজির নীচে নেই। গতবার এই সময় তা ১৪০ টাকা কেজির আশেপাশে ছিল। সেকেন্ড ফ্লাশ থেকে চাহিদা বাড়ছে।
মালিকপক্ষের পাল্টা দাবি, ২০১৯ সালে দেশে চা পাতার (সিটিসি) দাম উঠেছে কেজি প্রতি ১৪০.৮৫ টাকা। সেখানে ডুয়ার্সে ছিল ১৪৫.০৩ টাকা এবং তরাইতে ১২০.৭১ টাকা। এ বছর করোনার জেরে বাগানের পরিস্থিতি বছরের গোড়া থেকেই পাল্টেছে। ফার্স্ট ফ্লাশ বাজারই পায়নি।
যৌথমঞ্চের আহ্বায়ক জিয়াউল আলম, চা বাগান তৃণমূল কংগ্রেস মজদুর ইউনিয়নের মোহন শর্মা, নির্জল দে বা বিজেপির সংগঠনে তরফে জন বার্লার মতো নেতারা বৈঠকে অংশ নেন। সবাই জানান, ভাল পরিবেশ নতুন পদ্ধতিতে আলোচনা হয়েছে। মালিকপক্ষ চিন্তাভাবনা করতে বলেছিল। পরের দিন ফের কথা হবে। আশা করা যায়, শ্রমিক স্বার্থ বজায় রেখেই বোনাস চুক্তি সম্পন্ন হবে।
এ দিনের বৈঠকের পাহাড় ছাড়া ১৬৩টি বাগানের শ্রমিক, মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। এ বারেও পাহাড়ে আলাদা বোনাস বৈঠক হবে। সেখানে ৮৬টি বাগান রয়েছে। গতবারে দু’ভাগে বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বেশ কয়েকটি বাগান ঠিকঠাক তা দেয়নি বলে অভিযোগ। এ বার তাই শ্রমিকরা দাবিতে অনড়।