টাকা দিলে ট্রাকে ছাড়

টাকার বদলে ট্যাঙ্কার চালকদের হাতে যে রসিদ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাতে লেখা রয়েছে, ‘ট্রাক লরি ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ড’।

Advertisement

শুভঙ্কর চক্রবর্তী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৫:৩৩
Share:

এনজেপিতে ইন্ডিয়াল অয়েলের টার্মিনালের সামনে চলছে লরি থেকে টাকা সংগ্রহ। (ইনসেটে) এই কুপন দিয়েই টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র 

ফাঁসিদেওয়া, রাজগঞ্জের পর এ বার নিউ জলপাইগুড়িতে (এনজেপি) সিন্ডিকেট তৈরি করে তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এনজেপি স্টেশন লাগোয়া ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের টার্মিনাল থেকে তেল ভরে বেরোচ্ছে এমন প্রতিটি ট্যাঙ্কারের কাছ থেকে রসিদ দিয়ে তোলা আদায় করা হচ্ছে বলেই অভিযোগ। দিনের বেলায় টার্মিনালের গেটে দাঁড়িয়েই আদায় করা হচ্ছে টাকা। চালকদের একাংশের অভিযোগ ২০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। তৃণমূলের মদতেই তোলাবাজি হচ্ছে বলে একযোগে অভিযোগ তুলেছেন সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি নেতারা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব। একটি ট্যাঙ্কারের খালাসি বলেন, ‘‘টার্মিনালের কিছুটা দুরেই সকাল থেকে পুলিশ থাকে। ওদের সামনেই টাকা তোলা হয়। তবুও কিছুই বলে না। তাই ভয়ে অভিযোগ করি না।’’

Advertisement

টাকার বদলে ট্যাঙ্কার চালকদের হাতে যে রসিদ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাতে লেখা রয়েছে, ‘ট্রাক লরি ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ড’।

সেই সংগঠন কোন রাজনৈতিক দল অনুমোদিত? বা তার কোনও সরকারি নথিভুক্তি আছে কি? এই সব কোনও কিছুই রসিদে লেখা নেই।

Advertisement

ট্যাঙ্কার চালকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন সকালে থেকে রাত পর্যন্ত তিন-চার জন লোক রসিদ হাতে টার্মিনালের গেটে দাঁড়িয়ে থাকে। তারাই টাকা নেয়। টাকা না দিলে কোন ট্যাঙ্কারকে এলাকা থেকে যেতে দেওয়া হয় না বলেই অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালক বলেন, ‘‘টাকা না দিলে গাড়ি পার্ক করতে দেয় না। টার্মিনালে ঢুকতেও বাধা দেয়। প্রতিবাদ করলে মারধর করে।’’ শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (পূর্ব) গৌরবলাল বলেন, ‘‘আমাদের কাছে লিখিত কোনও অভিযোগ নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যা হচ্ছে, সবটাই আমাদের এলাকার বাইরে। তাই ওই বিষয়ে কিছু জানা নেই।’’

টাকা তুলে কী করছেন?

প্রশ্ন করতেই তোলা আদায়কারিদের এক জন উত্তর দেয়, ‘‘যা খুশি করব। তাতে কার কী?’’ অন্য এক জন এগিয়ে এসে টার্মিনালের সামনে থাকা একটি ঘর দেখিয়ে বলেন, ‘‘ওই খানে রাতে হিসেব করে সব টাকা আমরা দাদার হাতে দিয়ে দিই। আর কমিশন পাই।’’

কে ওই দাদা?

অনেক জিজ্ঞাসা করেও নাম বলতে চাননি ওই ব্যক্তি। ট্যাঙ্কার চালক, খালাসিদের একাংশ জানিয়েছেন প্রতিদিন রাতে তোলা আদায়কারিরা টার্মিনালের সামনে থাকা একটি ঘরে মদের আসর বসায়। শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএটিটিইউসি-র এনজেপি ইউনিটের সভাপতি প্রসেনজিৎ রায় বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে টার্মিনালের গেটে কোনও টাকা তোলা হয় না। কে বা কারা ওইখানে টাকা তুলছে সেটা জানা নেই। যদি কেউ আমাদের নাম করে থাকে তাহলে তাঁরা মিথ্যা বলছে।’’ সিটু-র দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, ‘‘ওই এলাকা দখল নিয়ে আগেও তৃণমূলের মধ্যে গন্ডগোল হয়েছে। এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ। তোলা আদায়ের পেছনে ওদেরই হাত আছে। পুলিশ রং না দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক।’’

দিনে অন্তত ২০০টি ট্রাক থেকে তোলা আদায় করা হয়। গড়ে একশো টাকা করে ধরলেও দাঁড়ায় ২০ হাজার টাকা। রোজ এত টাকা লেনদেন হয়, তবু কেউ কিছু জানে না, এমনটা খুবই অস্বাভাবিক বলে ধারণা বাসিন্দাদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement