Hospital

ইউটিউব দেখে অস্ত্রোপচার

হাসপাতাল সূত্রের খবর, তিন সন্তানের মা বছর আঠাশের এক গৃহবধূর গত বেশ কয়েকদিন থেকেই জরায়ু দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। বিষয়টি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যাওয়ার উপক্রম হলে গত বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়ির লোকেরা তাঁকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান।

Advertisement

পার্থ চক্রবর্তী

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০ ০৬:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি

অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে মোবাইলে ভিডিয়ো চলছে। আর সেখানে যেভাবে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, সেইভাবে চলছে অস্ত্রোপচার।

Advertisement

আলিপুরদুয়ার জেলার সরকারি হাসপাতালে এক মহিলার এমনই এক বিরল অস্ত্রোপচার করে রীতিমতো নজির গড়লেন আলিপুরদুয়ারের তিন সরকারি চিকিৎসক উদয়ন মিত্র, ঝুমি বরাইক ও মাধব পাল। করোনাভাইরাস ও লকডাউন নিয়ে আতঙ্কের মাঝেও তাঁদের এই সাফল্যে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত হাসপাতালের বাকি চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মীদের সকলে। হাসপাতাল সুপার চিন্ময় বর্মণ বলেন, ‘‘যে ভাবে ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে একটা সফল অস্ত্রোপচার করে তিন চিকিৎসক ওই রোগীকে মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচিয়ে এনেছেন, তাতে করে কোনও প্রশংসাই তাঁদের জন্য যথেষ্ট নয়।’’

হাসপাতাল সূত্রের খবর, তিন সন্তানের মা বছর আঠাশের এক গৃহবধূর গত বেশ কয়েকদিন থেকেই জরায়ু দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। বিষয়টি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যাওয়ার উপক্রম হলে গত বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়ির লোকেরা তাঁকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান। হাসপাতাল সুপার চিন্ময় বর্মণ জানান, প্রথমে ওই মহিলার জরায়ুতে টিউমারের মতো কিছু একটা হয়েছে বলে চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়েছিল। সেই অনুযায়ী শুক্রবার শল্য চিকিৎসক উদয়ন মিত্র, স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ ঝুমি বরাইক ও অ্যানাস্থেসিস্ট মাধব পালের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচারের জন্য ওই রোগিণীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement

কিন্তু অপারেশন থিয়েটারে তাঁকে ভাল করে পরীক্ষা করাতে গিয়ে চোখ কপালে ঠেকে যায় চিকিৎসকদের। তাঁরা খেয়াল করেন, টিউমারের জন্য ওই মহিলার গোটা জরায়ুটাই সম্পূর্ণ উল্টে গিয়েছে।

চিকিৎসক উদয়নের কথায়, ‘‘এমন ঘটনা বিরল। ডাক্তারি পড়ার সময় বইয়ে এমন ঘটনার কথা পড়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে এমন রোগীর চিকিৎসা কিংবা অস্ত্রোপচারও করার অভিজ্ঞতা আমাদের আগে কখনও হয়নি। অথচ, রোগীর যা অবস্থা ছিল, তাতে করে তাঁকে রেফার করারও উপায় ছিল না।’’ চিকিৎসক ঝুমি বরাইক বলেন, ‘‘তখনই আমরা ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। এবং ইউটিউব চালিয়ে গোটা পদ্ধতি দেখে অস্ত্রোপচার করা হয়।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্ত্রোপচারের পর ওই গৃহবধূ সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন।

আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে তিন চিকিৎসকের ভূমিকায় খুশি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরাও। মেডিক্যাল কলেজের ডিন তথা প্রসূতি বিভাগের বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ওই রোগীর যে অসুখটা হয়েছিল তাকে ডাক্তারি ভাষায় ক্রনিক ইনভারসন অফ ইউটেরাস বলে। যা খুবই বিরল। কিন্তু আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পিছিয়ে না গিয়ে যেভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইউটিউবের সাহায্যে অস্ত্রোপচার করেছেন, তাতে করে তাদের সকলকে কুর্নিশ জানাই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement