প্রকৃতির ডাকে প্রকৃতি ভরসা

শুধু এই দুটি স্কুলই নয়, মালদহ জেলার ১ হাজার ৯৪৬টি প্রাইমারি স্কুলের বেশির ভাগেই শিক্ষিকাদের জন্য পৃথক কোনও শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ০৬:৫৫
Share:

শৌচাগার? ২০০৭ এ স্কুলে শৌচাগার দু’টি তৈরি হয়। বছর চারেক আগে বেহাল হয়ে যায় দু’টিই। তার পর থেকে শৌচে ভরসা খোলা মাঠ। মালদহের ডোবা হাঁসপুকুর প্রাইমারি স্কুলে। ছবি: জয়ন্ত সেন

মালদহ জেলায় প্রথম যে দু’টি ব্লককে নির্মল বলে ঘোষণা করা হয়, তার একটি বামনগোলা। অথচ সেই ব্লকেরই ডোবা হাঁসপুকুর প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুদর্শন বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্কুলে ৪৭ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ২৮ জনই ছাত্রী। শিক্ষক আমরা দু'জন। স্কুলের দু’টি শৌচাগার ভেঙে যাওয়ার পর আর তৈরি হয়নি। প্রশাসনকে অনেক জানানো হলেও কাজ হয়নি। এখন স্কুলে এসে প্রকৃতির ডাক এলে মাঠেঘাটে যাই বাধ্য হয়ে।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘এমন অবস্থা আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে কী করা হবে, তা দেখছি।’’

Advertisement

আবার মালদহের হবিবপুর ব্লকের ঋষিপুর আর আর প্রাইমারি স্কুলে ছাত্রছাত্রী ১৫৩ জন। শিক্ষক ৫ জন, শিক্ষিকা এক জন। ছাত্রছাত্রীদের জন্য মাত্র দু’টি শৌচাগার। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য পৃথক কোনও শৌচাগারই নেই। তাই শিক্ষকরা ছাত্রদের শৌচাগার ও শিক্ষিকা ছাত্রীদের শৌচাগার ব্যবহার করেন।

এই ব্লকেরই কলাইবাড়ি প্রাইমারি স্কুলের ২৪৬ জন ছাত্রছাত্রীদের জন্য শৌচাগারই নেই। স্কুল চত্বরের কলাইবাড়ি আপার প্রাইমারি স্কুলের দু’টি শৌচাগার তারা ব্যবহার করে। স্কুলের চার শিক্ষিকার জন্য অবশ্য একটি শৌচাগার রয়েছে। সেই শৌচাগার ছাত্রীরাও ব্যবহার করে।

Advertisement

শুধু এই দুটি স্কুলই নয়, মালদহ জেলার ১ হাজার ৯৪৬টি প্রাইমারি স্কুলের বেশির ভাগেই শিক্ষিকাদের জন্য পৃথক কোনও শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। ফলে তাঁদের হয় ছাত্রীদের শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়, না হলে স্কুলের আশেপাশে কোনও বাসিন্দার বাড়ির শৌচাগারে যেতে হয়। এ দিকে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শৌচাগারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও বেহাল দশা। সেগুলি নিয়মিত সাফ হয় না বলে অভিযোগ। শৌচাগারে পর্যাপ্ত জলেরও ব্যবস্থা নেই। জেলার হাই স্কুল ও মাদ্রাসাগুলিতেও ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের জন্য পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। যা শৌচাগার রয়েছে সে সব নিয়মিত সাফাইও হয় না বলে অভিযোগ।

বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করেন যে, শিক্ষিকারা এত বেশি স্ত্রীরোগে ভুগছেন যে তাতে তিনি রীতিমতো আতঙ্কিত। তার পরে শিক্ষিকারা কেন বেশি স্ত্রীরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। শিক্ষা মহলেরই একাংশের অভিযোগ, বেশির ভাগ স্কুলেই শিক্ষিকাদের জন্য পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। নেই ভেন্ডিং মেশিন। শৌচাগার নিয়মিত সাফাই হয় না। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অনিতা দাস বলেন, ‘‘অপরিষ্কার শৌচাগার থেকেই নানা স্ত্রীরোগের জন্ম। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, পেলভিট ইনফ্লামেটরি ডিজিজ সহ নানা রোগ শৌচাগার অপরিচ্ছন্ন থাকার জন্যই হয়ে থাকে।’’

মালদহে ৫৬৪টি হাইস্কুল ও মাদ্রাসা রয়েছে। সেখানকার অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকারাই জানাচ্ছেন, শিক্ষিকাদের জন্য পৃথক শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকলেও বেশির ভাগ প্রাইমারি স্কুলে তার কোনও বালাই নেই।

মালদহের বার্লো গার্লস হাইস্কুলে ৪০ জন শিক্ষিকার জন্য শৌচাগার মাত্র তিনটি। আর প্রায় দু’হাজার ছাত্রীর জন্য শৌচাগার ১৪টি। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপশ্রী মজুমদার বলেন, ‘‘শৌচাগার সাফসুতরো রাখার জন্য সাফাইকর্মী অবশ্যই দরকার। এ জন্য অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। কিন্তু তা দেওয়া হয় না। যে টাকা মেলে তাতে শৌচাগার সহ স্কুল চত্বর সাফাই করা, বিদ্যুতের বিল মেটানো, নিরাপত্তারক্ষী রাখা, স্কুলের কিছু উন্নয়ন করা কি সম্ভব?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement