কানামাছি: স্কুল বন্ধ। খেলায় মশুগুল বড়-ছোট সকলেই। বৃহস্পতিবার বালুরঘাটে। ছবি: অমিত মোহান্ত
আবার অনলাইন ক্লাস! আর তো ভাল লাগছে না।
করোনা আমাদের নতুন অনেক কিছু শেখাল। এর আগে তো স্কুল বলতে জানতাম উদার আকাশ। ক্লাস বলতে বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ। করোনার ধাক্কায় প্রথম বার লকডাউন হল। আকাশ আর বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ চলে এল স্মার্ট ফোনের মধ্যে। সেই পড়ার রেওয়াজ এখনও চলছে। এই তো সবে স্কুল খুলল। খুলেই আবার ঝটপট গরমের ছুটি পড়ে গেল। সেই ছুটি আরও বেড়েছে। শুনছি, এখন আবার অনলাইনে ক্লাস করানোর কথা বলছেন শিক্ষিকারা।
সত্যি কথা বলতে, আমার আর একেবারেই অনলাইনের ক্লাস ভাল লাগছে না। এমন নয় যে, আমি পড়াশোনায় খুব একটা মনোযোগী নই। এরকমও নয় যে, আমাদের স্মার্ট ফোন নেই। সবই রয়েছে। কিন্তু ক্লাসে বসে পড়াশোনা বোঝার যে শান্তি, তা অনলাইনে নেই।
আমাদের বাড়িতে একটিই স্মার্ট ফোন রয়েছে। বাবা স্বপন পাল একটি সারের দোকান চালান। বাবার স্মার্টফোনেই আমার ক্লাস। বাবার যখন কাজ থাকে, তখন ক্লাসে অসুবিধাই হয়। কারণ, বাবার গ্রাহকদের অনেকেরই ফোন আসে। তবে কেবল তা-ই নয়, স্মার্টফোনে অনলাইন ক্লাসে অনেক সমস্যা রয়েছে।
গুগল মিটে ক্লাস করতে শেখানো হয়েছে আমাদের স্কুল থেকে। কিন্তু যখন অনেকে একসঙ্গে ক্লাস করতে শুরু করে, তখন অনেকেই নিজেদের স্পিকার ‘মিউট’ করতে ভুলে যায়। এমন সব শব্দ ঢুকে পড়ে সেখানে, যা ক্লাসঘরে ঢুকত না। ফলে অনেক ক্লাসে পড়া বুঝতে অসুবিধা হয়। বিশেষ করে অঙ্কের ক্লাসে।
আর একটি বড় সমস্যা নেটওয়ার্ক। নেট গোলমাল করলে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার খেই হারিয়ে ফেলি। তার মধ্যে ঝড়বৃষ্টি হলে তো আর কথাই নেই। নেট যে কখন আসবে, কে জানে! আমাদের ক্লাসে ৫০-৬০ জন ছাত্রী রয়েছে। কয়েক জনের বাড়িতে স্মার্টফোন নেই। পরে তারা বলে, ক্লাস করতে পারল না! আরও খারাপ লাগে।
আমরা শিক্ষিকাদের কাছে অনুরোধ করেছি, স্কুলটা খোলা থাক। আমরা ক্লাস করব। কিন্তু শিক্ষিকারা জানিয়ে দেন, সরকারি নিয়মের বাইরে যাওয়ার রাস্তা নেই। তবুও, আমার ভাল লাগছে না।
জয়শ্রী পাল, নবম শ্রেণি
অনুলিখন: শান্তশ্রী মজুমদার