পাশে: রক্তদান করলেন জ্যোতি দত্ত। নিজস্ব চিত্র।
প্রসবের সময় রক্তক্ষরণ হওয়ায় শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা একেবারেই কমে গিয়েছিল। ফলে জরুরি ভিত্তিতে ওই মহিলার রক্তের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে ‘বি নেগেটিভ’ গ্রুপের রক্ত না থাকায় বিপাকে পড়েন পরিজনরা। রক্তের অভাবে জীবন সঙ্কটে পড়েন মহিলা। বিষয়টি জানতে পেরে তৎপর হন কিছু যুবক। তাদের তৎপরতায় হাসপাতালে গিয়ে ওই মহিলাকে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচালেন নার্সিং-এ পাঠরত এক ছাত্রী।
মালদহের চাঁচল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে মঙ্গলবারের ঘটনা। রক্ত পেয়ে প্রসূতি প্রাণ ফিরে পাওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি খুশি পরিজনেরাও। আর রক্তের যোগান মেলায় আশঙ্কার বাতাবরণ কেটে মধুরেন সমাপয়েত ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকল সম্প্রীতিও। কেননা তানজেরাবিবিকে রক্ত দান করে প্রাণ বাঁচানো ওই ছাত্রীর নাম জ্যোতি দত্ত।
চাঁচল-১ ব্লকের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য় বলেন, ‘‘চাঁচলে বেশ কিছু যুবক ও তরুণী যেভাবে রক্তের সঙ্কট মেটাতে উদ্যোগী হয়েছেন তা প্রশংসনীয়।’’
স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রথমে গত লোকসভা ভোটের ও পরে করোনাকালে জেলাজুড়ে রক্তের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এখনও তা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে রক্তের যোগান দিয়ে চলেছে চাঁচলের আওয়াজের মতো একাধিক গ্রুপ। কখনও হাসপাতাল, কখনও রোগীদের মাধ্যমে জেনে হোয়াটসঅ্যাপে, ফেসবুকে আবেদন জানিয়ে পোস্ট করেন। তানজেরার রক্তের প্রয়োজনীয়টতার বিষয়টিও জানতে পেরে উদ্যোগী হয় চাঁচলের আওয়াজ গ্রুপ। তা জানতে পেরেই এগিয়ে আসেন জ্যোতি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হন হরিশ্চন্দ্রপুরের পারোর তানজেরা। তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেন। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরে তানজেরার প্রাণ সংশয় দেখা দেয়। প্রয়োজনীয় বি নেগেটিভ রক্ত হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে ছিল না।
জ্যোতি বেঙ্গালুরুতে নার্সিংয়ের ছাত্রী। করোনাকালে বাড়িতেই রয়েছেন। জ্যোতি এ দিন বলেন, ‘‘আমার জন্য কেউ জীবন সঙ্কট থেকে বাঁচলেন এটা ভেবে ভালো লাগছে।’’
অভিজিৎ দাস, রেজিনা খাতুন, শম্পা দাসরা বলেন, মানুষের প্রতি সবারই কিছু দায়বদ্ধতা থেকে আমরা সাধ্যমতো এভাবেই কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর সঙ্কট কেটে আপাতত সুস্থ তানজেরা বলেন, ‘‘ওদের অবদান কোনওদিন ভুলব না।’’