পাহাড় থেকে শুরু করে তরাই। কিংবা ডুয়ার্সের প্রায় সিংহভাগ চা বাগান। বুধবার দেশজোড়া সাধারণ ধর্মঘটের কোনও প্রভাবই পড়ল না কোথাও। সব বাগানেই সকালে নির্দিষ্ট সময়েই এ দিন শুরু হয় কাজ। দিনের কাজও শেষ হয় নির্দিষ্ট সময়েই।
একটা সময় ধর্মঘটের ব্যাপক প্রভাব পড়ত চা বলয়ে। বেশিরভাগ চা বাগানেই কাজ বন্ধ হয়ে যেত। বাম আমলে এই ছবি বহুবার দেখেছেন চা শ্রমিক ও মালিকেরা। রাজ্যে পালাবদলের পর তৃণমূলের আমলেও বেশ কয়েকবার কর্মনাশা ধর্মঘটের সাক্ষী থেকেছে বিভিন্ন বাগান। ইদানীং এই অবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন ঘটেছে। যার জেরে গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে এত ভোট পাওয়া বিজেপি নেতাদের ডাকা শেষ বন্ধেও বাগানে সেরকম প্রভাব পড়েনি। বুধবারও একই ছবি।
এ দিন দার্জিলিং পাহাড়ের সব চা বাগানই খোলা ছিল। তরাইয়ে দু’তিনটি বাদ দিয়ে বাকি সব বাগানেই কাজ হয়। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার সিংহভাগ বাগানও খোলা ছিল। সুখা মরসুমের জন্য এই মুহূর্তে চা বাগানগুলিতে পাতা তোলা বা উৎপাদনের কাজ বন্ধ। ডুয়ার্স ও তরাইয়ের বাগানগুলিতে শুধুমাত্র শীতকালীন পরিচর্যার কাজ চলছে। প্রতিদিন যে কাজ মূলত একবেলাই হয়। তবে শ্রমিকরা অবশ্য গোটা দিনেরই মজুরি পান। বিভিন্ন বাগান সূত্রে জানা গিয়েছে, আর পাঁচটা দিনের মতো এদিনও সমস্ত চা বাগানে নির্দিষ্ট সময়েই শীতকালীন পরিচর্যার কাজ শুরু হয়। কাজ শেষও হয় নির্দিষ্ট সময়ে। কোনও বাগানেই ধর্মঘট সমর্থকদের পিকেটিং করতেও দেখা যায়নি। টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার উত্তরবঙ্গ শাখার সম্পাদক রাম অবতার শর্মা বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনভুক্ত সিংহভাগ বাগানেই এ দিন স্বাভাবিক কাজ হয়েছে।’’ একই কথা বলেন ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুমন্ত গুহঠাকুরতা এবং ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী। বিভিন্ন বাগান মালিক সংগঠন সূত্রের খবর, এ দিন পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের চা বাগানগুলিতে ৯৫ শতাংশের বেশি হাজিরা ছিল। সিটুর আলিপুরদুয়ার জেলা সম্পাদক বিদ্যুৎ গুণ বলেন, ‘‘শীতকালীন পরিচর্যার কাজে শ্রমিকেরা ভোরেই কাজে বেরিয়ে পড়েন। সেজন্যই এদিনের ধর্মঘটে আমরা বেশিরভাগ বাগানে পিকেটিং করিনি। তবে আমাদের সংগঠনের শক্তি বেশি এমন বেশ কয়েকটি বাগানে ধর্মঘট সর্বাত্মক হয়েছে।’’ বাগান খোলা থাকায় খুশি বিজেপি নেতারা। দলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘‘কংগ্রেস, বামফ্রন্ট ও ধর্মঘট ডাকা সংগঠনগুলি ধর্মঘটের প্রচারে নতুন আইনের বিরোধিতাকে সকলের আগে তুলে এনেছিলেন। বাগান শ্রমিকরা ধর্মঘট ব্যর্থ করে বুঝিয়ে দিলেন, তাঁরা নতুন আইনের পক্ষে।’’ তৃণমূল মজদুর ইউনিয়নের নেতা অসীম মজুমদার বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা নতুন আইন ও এনআরসি-র বিরুদ্ধেই রয়েছেন। তবে আমরা তাঁদের ধর্মঘটে শামিল হতে না বলেছিলাম। তাঁরা কথা শুনেছেন।’’