Diego Maradona

মারাদোনা স্মরণে

বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠসে তার চেহারাটা। বলছিলেন জলপাইগুড়ি শহরের দুই ফুটবলপ্রেমী সৌমিক মজুমদার এবং গৌতম সোম। বছরটা ২০০৮ সাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৫৯
Share:

—ফাইল টিত্র।

বন্‌ধ বাদ সাধেনি ফুটবলের ঈশ্বরকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে। তাঁদের অনেকে ছোটবেলায় টিভিতে প্রিয় তারকা ফুটবলারের খেলা দেখে বুঁদ হয়েছেন। কেউ খেলা দেখে ভক্ত হয়েছেন নীল সাদা জার্সির ওই আর্জেন্টিনার। কেউ বল পায়ে পাড়ার মাঠে নেমেছেন সেই খেলা দেখে উৎসাহ পেয়েই। বাঁ পায়ের সেই ফুটবলের জাদুর স্বাদ কেউ নিয়েছেন পরে-বই পড়ে, টিভিতে রেকর্ডিং দেখে, ইউটিউবে সার্চ করে। এই ভাবে মারাদোনার শোকে গোটা বিশ্বের সঙ্গে মিলে গেল উত্তরবঙ্গ।

Advertisement

ছিলেন, আছেন, থাকবেন

বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠসে তার চেহারাটা। বলছিলেন জলপাইগুড়ি শহরের দুই ফুটবলপ্রেমী সৌমিক মজুমদার এবং গৌতম সোম। বছরটা ২০০৮ সাল। মারাদোনা ভারতীয় ফুটবলের মক্কা কলকাতায়। ঘরে তাই বসে থাকতে পারেননি ওই দু’জন। দু’জনের ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সদস্যও। ক্লাব টেন্ট থেকেই টিকিটের ব্যবস্থা হবে, সেই আশ্বাসেই গিয়েছিলেন ফুটবলের ঈশ্বরকে দেখতে। পাছে দেরিতে গেলে টিকিট না মেলে তাই দু’দিন আগেই কলকাতায় চলে যান। সেই স্মৃতির রেশ এখনও স্পষ্ট। যুবভারতীতে দর্শকের উল্লাসের গগনভেদি শব্দের মাঝে চোখের সামনে মাঠে হাজির সেই মারাদোনা। সৌমিকের কথায়, ১৯৮৬ সালে টিভিতে দেখা বিশ্বকাপের স্মৃতি আঁকড়ে সেই মানুষটাকে দেখতে গিয়েছিলাম। কলকাতাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন বিশ্বের এই কোণে যে ‘সকার’ এত জনপ্রিয়, জানতামই না। গ্যালারি ফেটে পড়ল। পায়ে বল নাচালেন। দর্শকদের অনুরোধ মেনে গ্যালারিতে শট মারলেন বাঁ পায়ে। একটা প্রীতি ম্যাচ ‘কিক অপ’ করে মাঠের বাইরে বসে দেখছিলেন। যখনই কোনও দল গোলের সুযোগ তৈরি করছে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে ফুটবলের ঈশ্বর। যেন শিখিয়ে দিয়ে গেলেন ফুটবলটা ভালবাসতে হবে এভাবেই। বুধবার খবরটা পাওয়ার পরে বারবার মনে হচ্ছিল, তিনি ছিলেন, তিনি আছেন, তিনি থাকবেন এই ফুটবল বিশ্বে।

Advertisement

খুদেদের স্মরণ

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা। ফুটবলের প্রস্তুতি নিতে মালদহের বৃন্দাবনী ময়দানে রুটিন অনুযায়ী হাজির মালদহ ক্লাব ফুটবল অ্যাকাডেমির কিশোর-কিশোরীরা। মাঠে ফুটবল রেখে দিয়েগো মারাদোনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণসভা করে খুদে ফুটবলাররা। কিশোর ফুটবলার তন্ময় দাসের কথায়, ‘‘ইউটিউবে মারাদোনার খেলা দেখান কোচেরা।” ফুটবল কোচ শিবশঙ্কর পাল, নির্মল লোধরা বলছেন, ‘‘টিভির পর্দায় ১৯৮২, ১৯৮৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা দেখেছি। আজ আমরা সত্যিই ঈশ্বরহীন হলাম।”

বন্‌ধেও ছাপা হল ফ্লেক্স

কারও বয়স আট, কারও ষাট। সকলেই মিলিত হয়েছে একটাই কারণে। তাদের প্রিয় তারকা মারাদোনার ছবিতে শ্রদ্ধা জানাতে। বৃহস্পতিবার বনধে তাই সব দোকান বাজার বন্ধ থাকলেও সচল ছিল প্রিন্টিং ফ্লেক্সের দোকানগুলো। সকাল থেকেই মারাদোনার ছবি দিয়ে একের পর এক ফ্লেক্স ছাপা হয়েছে সেখানে। 'চোখের জলে বিদায়', 'বিদায় ফুটবলের রাজপুত্র' ইত্যাদি নানা বাক্যবন্ধ। মালবাজারের আদর্শ বিদ্যাভবনের সামনে ফ্লেক্স প্রিন্টের দোকান মালিক অপু দাস বলেন, ‘‘বনধে দোকান খোলার ইচ্ছে ছিল না। শুধু মারাদোনার জন্যেই দোকান খুলেছি।’’ ইস্টবেঙ্গলিয়ান সংঘের তরফে শহরের ঘড়িমোড়ে মারাদোনার ছবির সামনে শ্রদ্ধার্পণ করে মোমবাতি জালানো হয়।

মুখে মুখে বার্তা

জেওয়াইএমএ মাঠে প্রতিদিন সকালে প্রাক্তন এবং বর্তমান ফুটবলাররা রোজই শরীরচর্চা ও ফুটবলের অনুশীলন করতে আসেন। বুধবার রাতে মারাদোনার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর জলপাইগুড়ি ভেটারেন্স ক্লাবের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এদিন সকালে স্মরণসভা হবে। মুখে মুখে শহরের খেলোয়াড়দের কানে খবর পৌঁছে যায়। সকালে মাঠে সকলেই হাজির হয়ে যান। ভেটারেন্স ক্লাবের সম্পাদক সন্টু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ফুটবলের ইতিহাসে এক নক্ষত্রের পতন হল।” প্রাক্তন ফুটবলার অলোক সরকারের কথায়, মারাদোনা ফুটবল শিল্পী। বুড়া দে বলেন, “১৯৮৬-র বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে তাঁর দেওয়া গোল ভুলতে পারব না।” সুবীর মল্লিক, প্রদীপ তলাপাত্র বলেন, ‘‘পেলের খেলা দেখিনি। মারাদোনাই আমাদের মুগ্ধ করেছেন।’’ শিলিগুড়িতে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার তরফে শীঘ্রই মারাদোনার স্মরণে সভা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement