chitmahal

Independence Day: বাবা-মা ছিল ভি‌ন্‌দেশি, জন্মেই কিন্তু ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবস হয়েছিল জিহাদের

১০ বছর আগের সেই আন্দোলনের প্রথম সাফল্য পাওয়ার ইতিহাস জড়িয়ে গিয়েছে জিহাদের নামের সঙ্গে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ০৯:২১
Share:

জিহাদ হোসেন আলি। নিজস্ব চিত্র

নাগরিক হিসাবে অধিকার আদায়ের আন্দোলন। আর সেই দ্রোহকালেই জন্ম কোচবিহারের জিহাদ হোসেন আলির। আরও স্পষ্ট করে বললে, জিহাদের জন্মের সূত্র ধরেই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রথম জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। তাঁদের কাছে ১০ বছর আগের সেই আন্দোলনের প্রথম সাফল্য পাওয়ার ইতিহাস জড়িয়ে গিয়েছে জিহাদের নামের সঙ্গে। সেও এক ভিন্ন স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস।

Advertisement

দ্রোহকালে জন্ম নেওয়া সেই জিহাদের বয়স এখন ১০। স্বাধীনতা কাকে বলে? আচমকা প্রশ্নের মুখে পড়ে কিছুটা হকচকিয়ে যায় সে। কিছু ক্ষণ পর ঘাড় নেড়ে জানাল ‘না’। স্তম্ভিত ভাবটা কিছুটা কাটিয়ে বলে, ‘‘১৫ অগস্ট ভারত স্বাধীন হয়েছিল। আমরা ওই দিন স্কুলে গিয়ে দেশের পতাকা তুলি।’’ ছিটমহল কী তা জানে না জিহাদ। তবে তার জন্মের সময় হাসপাতালে যে একটা আন্দোলন হয়েছিল সেটা বাবার মুখে শুনেছে। কী সেই ঘটনা?

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই রাত ১২টায় ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিনিময় হয়েছিল ছিটমহলের। তার আগে পর্যন্ত কোচবিহারের দিনহাটা মহকুমার মধ্য মশালডাঙা ছিল নেই-রাজ্য। মানুষ ছিল। কিন্তু নাগরিক স্বীকৃতি না থাকায় মিলত না কোনও পরিষেবা। সেই পরিস্থিতিতেই অধিকার আদায় করে নেওয়ার আন্দোলন সংগঠিত করেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। ছিটমহল বিনিময়ের আগে ওই এলাকার বাসিন্দারা অসুস্থ হলে এ দেশের হাসপাতালে ভর্তি হতেন বটে, তবে ভারতীয় হিসাবে পরিচয় দেওয়া হত না।

Advertisement

বাবা শাহজাহান আলির সঙ্গে জিহাদ। নিজস্ব চিত্র

২০১০-এর ২৭ মার্চ সেখানকার বাসিন্দা শাহজাহান আলির স্ত্রী আসমা বিবিকে সন্তানসম্ভবা অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিল দিনহাটা মহাকুমা হাসপাতালে। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আন্দোলন সংগঠিত করেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি ছিল, ছিটমহলবাসী পরিচয় দিয়েই আসমাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতে নারাজ ছিলেন। কারণ, তা করলে আসমার সন্তানকে জন্মগত ভাবে ভারতীয় হিসাবে পরিচয় দিতে হত। কিন্তু নাছোড় ছিলেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। তাঁরা হাসপাতাল চত্বর ঘেরাও শুরু করেন। এর পর কিছুটা নরম হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসন। তাদের তরফে বলা হয়, আসমার সন্তান প্রসবের পর চলে যেতে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা আসমার সন্তানের জন্মের শংসাপত্রও দাবি করেন। কর্তৃপক্ষও বাধ্য হন সেই শংসাপত্র দিতে। সদ্যোজাতের নাম দেওয়া হয় জিহাদ। সেই প্রথম ছিটমহলের এক বাসিন্দা জন্মসূত্রে ভারতের নাগরিকত্ব পায়। সেটা আন্দোলনের প্রথম সাফল্য। আর তাতেই পরবর্তী কালে আরও জোরদার হয় ছিটমহলবাসীর আন্দোলন।

জিহাদের জন্মের সঙ্গেই জড়িয়ে গিয়েছে অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ইতিহাস। জিহাদের বাবা শাহজাহান আলি বলছেন, ‘‘জিহাদের জন্মের দিনটি কখনও ভোলার নয়। ওর জন্মও তো ছিটমহল আন্দোলনের একটি অংশ। নিজের সন্তানের পরিচয়ের দাবিতে স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। আমরা ঠিক করেছিলাম হয় পরিচয় পাব, না হলে জেলে যাব। সেই আন্দোলনে আমরা সফল হয়েছিলাম। প্রত্যেকে নতুন করে আন্দোলনের শক্তিও পেয়েছিলাম।’’

শাহজাহানের সুর ছিটমহল আন্দোলনের নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্তর গলাতেও। তিনি বলছেন, ‘‘ছিটমহলের মানুষ দীর্ঘকাল বঞ্চনা সহ্য করেছেন। ছিটমহলের জমির উপর দিয়ে ভারতের বিদ্যুতের তার গেলেও ওখানকার মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ পেতেন না। ছিটমহলের জমির উপর দিয়ে অবাধে ভারতীয়েরা যাতায়াত করতেন। চালু ছিল বাস পরিষেবা। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা কোনও পরিষেবা পেতেন না। ছিটমহলের বাইরে গেলে সেখানকার বাসিন্দাদের গ্রেফতার করা হত। এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষকে অধিকার পাইয়ে দিতেই আসমা বিবিকে দিনহাটা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেই আন্দোলন সফল হয়েছিল।’’

স্বাধীন দেশের মধ্যে এক অন্য স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বহন করছে এই ছিটমহল। লড়ে নেওয়া সেই অধিকারই তো জন্মপরিচয় দিয়েছিল জিহাদকে। বড় হয়ে ছিটমহলের ইতিহাস জেনে নিজের জন্মকথাকেও নতুন করে শিখবে এই ১০ বছরের বালক। আপাতত শিখে নিয়েছে— আমাদের দেশের নাম ভারত, ১৫ অগস্ট আমাদের স্বাধীনতা দিবস, ওই দিন আমাদের স্কুলে পতাকা তোলা হয়। সেই ‘আমাদের’ সেই পতাকার অধিকার অর্জনের ইতিহাস বোঝার মতো বয়স এখনও হয়নি ওর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement