সিদ্ধান্ত-বদল: জলপাইগুড়ি পুরসভার বৈঠকে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
শহরে করোনা বিধিনিষেধ নিয়ে জলপাইগুড়ি পুরসভার একের পর এক ‘বিভ্রান্তিকর’ সিদ্ধান্তের জেরে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ উঠল। এমনকি, বিধিনিষেধের বদলে পুর-নির্দেশের জেরে বাজারে বিধিভঙ্গেরই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ শহরবাসীর। সব মিলিয়ে এই ঘটনায় বিরক্ত জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপও করেছেন স্বয়ং জেলাশাসক।
গত সোমবার পুরসভা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়, করোনা নিয়ন্ত্রণে ১৯, ২২, ৩০ এবং ৩১ জানুয়ারি— এই চারদিন শহরের সব দোকান-বাজার বন্ধ থাকবে, টোটোও চলবে না। মঙ্গলবার ফের বৈঠকে বসে পুরসভা ঘোষণা করে, শহরের সব বাজার একসঙ্গে বন্ধ হবে না। পর্যায়ক্রমে বন্ধ হবে। এক একদিন এক এক রকম ঘোষণায় শহর জুড়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। পুরসভার ভূমিকায় বিরক্ত জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকেরাই। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের মন্তব্য, “পুরসভার প্রশাসক বোর্ড নিজেদের এক্তিয়ারই জানে না।”
কোনও শহরের সব বাজার একসঙ্গে বন্ধ রাখা যাবে না, এই সিদ্ধান্ত খোদ নবান্নের। কোথাও কড়া বিধিনিষেধ জারি করতে হলে অবশ্যই জেলাশাসকের সম্মতি নিয়ে করতে হবে, তাও জানানো হয়েছিল। এবং কোথাও ‘লকডাউন’ হবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রও। তার পরেও পুরসভার এক প্রশাসক বোর্ডের সদস্যের মুখে ‘আংশিক লকডাউন’ শব্দ ভাইরাল হয়ে যায়। চারদিন শহর বন্ধ থাকবে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। বাসিন্দারা তড়িঘড়ি বাজারে ভিড় করে। তাতে ভিড় কমার থেকে উল্টে ভিড় বেড়ে বিধিভঙ্গের উপক্রম হয়। পুরসভার এ হেন সিদ্ধান্তের খবর পেয়ে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা ফের নির্দেশ দিয়ে বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে বলেন পুর কর্তৃপক্ষকে। প্রশাসনের থেকে ‘বকুনি’ খেয়ে এ দিন পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্যরা মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে নেওয়া নিজেদের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। যা শুনে এক বিরোধী নেতার মন্তব্য, “জলপাইগুড়ি পুরসভা চলছে, নাকি ক্লাব চলছে বোঝা যাচ্ছে না।”
এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০ জানুয়ারি দিনবাজার, মার্চেন্ট রোড, ইন্দিরা কলোনি, রায়কতপাড়া, বেগুনটারি এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। পরদিন, ২১ জানুয়ারি স্টেশন বাজার থেকে বাবুপাড়া, তেলিপাড়া বন্ধ থাকবে। ২২ জানুয়ারি পান্ডাপাড়া এলাকা বন্ধ থাকবে। ২৪ জানুয়ারি উকিলপাড়া ও শান্তিপাড়া-বয়েলখানা বন্ধ থাকবে। ২৭ জানুয়ারি মাসকালাইবাড়ি থেকে শিরীষতলা পর্যন্ত এবং ২৯ জানুয়ারি গান্ধী মোড় থেকে টিকিয়াপাড়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ৩১ জানুয়ারি কদমতলা, থানা মোড় বন্ধ থাকবে। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সন্দীপ মাহাতো বলেন, “অনুমতি পেলে আগামিকাল থেকে ঘোষণা হবে।’’ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সোমবারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কারণ শহর পুরোপুরি বন্ধ হলে সকলের অসুবিধে হবে।’’
শহর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি অম্লান মুন্সি বলেন, “অপদার্থতার একটা সীমা থাকে। পুরসভার প্রশাসক বোর্ডে সদস্যদের নিজেদের মধ্যেই কোনও সমন্বয় নেই। হঠকারী ঘোষণায় শহরবাসীর রক্তচাপ উৎকণ্ঠা বেড়ে যাচ্ছে।’’