ছবি: পিটিআই।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট পাওয়ার অনিশ্চয়তা থেকেই কি আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন সাংসদ তথা দলের জেলা চেয়ারম্যান দশরথ তিরকে ও নাগরাকাটার বিধায়ক শুক্রা মুন্ডা বিজেপিতে যোগ দিলেন? ক্ষমতার বৃত্তে থাকার ইচ্ছে থেকেই কি এই দলবদল? শনিবার আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলার রাজনীতিতে দুই নেতাকে নিয়ে এই প্রশ্নই দিনভর ঘোরাফেরা করল। সেই সঙ্গে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানো এই দুই নেতা আদৌ নিজেদের কতটা সুবিধা করতে পারেন, সেই প্রশ্নও উঠে আসছে বিজেপির অন্দরে।
২০১৫ সালের এক শীতের বিকেলের কথা এখনও মনে রয়েছে নাগরাকাটাবাসীর। কুর্তি চা বাগানে মালিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে যাওয়ার কথা থাকলেও, তার বদলে সম্পূর্ণ উল্টো পথ ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় গিয়ে দাঁড়ায় প্রত্যন্ত গাঠিয়া চা বাগানের শ্রমিক মহল্লার ভেতরে শুক্রার বাড়ির সামনে। মুখ্যমন্ত্রী সে দিন তাঁকে বাড়িতে না পেলেও তিনি নিজের ইচ্ছায় তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে সেই নাগরাকাটা আসন থেকে জয়ী হন। অন্য দিকে, ২০০১ সাল থেকে টানা তিনবার আরএসপির টিকিটে আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন দশরথ। বাম আমলে পূর্ত দফতরের প্রতিমন্ত্রীর পদও সামলেছেন তিনি। ২০১১ সালে পালা বদলের পর তৃণমূলের সঙ্গে সখ্য বাড়তে শুরু করে তাঁর। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁর পরাজয় হয়।
তৃণমূল সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনে হারলেও মাস কয়েক আগে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব দশরথকে দলের আলিপুরদুয়ার জেলা চেয়ারম্যানের পদে বসায়। কিন্তু ওই নির্বাচনের পর শুক্রার বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে একাধিকবার চর্চা হয়। তৃণমূল জেলা নেতাদের একাংশের কথায়, আসন্ন ভোটে দলের টিকিট পাওয়া নিয়ে যেমন অনিশ্চয়তা রয়েছে, তেমনই এলাকায় বিজেপির প্রভাব বৃদ্ধিও দু’জনের কাছে দুশ্চিন্তার কারণ। ডুয়ার্স তথা চা বাগান এলাকায় গেরুয়া শিবির কতটা প্রভাব বাড়িয়েছে, তা গত বছর লোকসভা ভোটের ফলেই স্পষ্ট, বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। শুক্রার কেন্দ্র নাগরাকাটা থেকে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে ‘লিড’ পেয়েছিল বিজেপি। সেটাও শুক্রার চিন্তার কারণ। যে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত নাগরাকাটা, সেখানে ৫৫ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল বিজেপি।
দশরথ অবশ্য বলেন, “টিকিটের কথা কখনওই ভাবিনি। গত লোকসভা নির্বাচনে দলের নেতারাই আমায় হারিয়েছেন। পিকের প্রতিনিধিদের নির্দেশ মতো রাজনীতি করা সম্ভব নয়। তাই বিজেপিতে গেলাম।” যার উত্তরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামীর কটাক্ষ, “দূরাত্মার ছলের অভাব হয় না।” তৃণমূলের জোসেফ মুন্ডা এ দিন বলেন, “শুক্রার বিদায় তৃণমূলের জন্যে খুব ভাল খবর।” কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে কি দশরথ ও শুক্রাকে টিকিট দেবে বিজেপি? দলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, “সেটা সময়ই বলবে।” আর শুক্রাকে নিয়ে বিজেপি সাংসদ জন বার্লা বলেন, ‘‘শুক্রাকে বিধায়ক পদ পেতে গেলে খুব খাটতে হবে। এখানে আমার মতামতে কিছু হবে না।”