তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া।
রাজ্যের মন্ত্রিসভায় বুধবার রদবদল হয়েছে। জেলা থেকে এক জন হয়েছেন পূর্ণ মন্ত্রী। আর বিতর্ক-বিদ্ধ এক প্রতিমন্ত্রী বাদ পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার রাতে কোচবিহারের সিতাইয়ের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়ার ফেসবুক-বার্তা—‘নাউ আই অ্যাম ফ্রি’ (এখন আমি মুক্ত) চলে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রে। শুরু হয়েছে জল্পনা। কেন তিনি এমন লিখলেন জানতে চাওয়ায় বিধায়কের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি সংগঠন এবং প্রশাসনের কোনও দায়িত্বে নেই। সে জন্যই আমি মুক্ত।” যদিও বিধায়কের অনুগামীদের দাবি, এই বার্তার পিছনের কারণ অন্য। হয়তো ‘উপেক্ষিত’ থাকার অনুভূতি। হয়তো ‘অভিমান’। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জেলা তৃণমূলের সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিকের মন্তব্য, ‘‘আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে সবাই মিলে দলকে শক্তিশালী করে তুলব।”
মন্ত্রিসভায় বুধবার রদবদল হওয়ার পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর দায়িত্ব পান দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ। রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা কোচবিহারের আর এক বিধায়ক পরেশ অধিকারীকে অপসারিত করা হয়। বিধায়কের ঘনিষ্ঠদের দাবি, জগদীশ আশা করেছিলেন এ বার তিনি মন্ত্রিসভায় সুযোগ পাবেন। কারণ, দল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই তৃণমূলের হয়ে লড়াই করেছেন জগদীশ। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি সিতাই থেকে জিতেছিলেন। ২০১৯ সালের লোকসভা উপনির্বাচনে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের দু’টি বিধানসভা থেকে লিড নিয়েছিল তৃণমূল, যার একটি সিতাই, অন্যটি শীতলখুচি। গত বিধানসভা নির্বাচনে জেলার দু’টি আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। একটি মেখলিগঞ্জ, অপরটি সিতাই। মেখলিগঞ্জের বিধায়ক পরেশ অধিকারীকে মন্ত্রী করা হয়। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় যদিও সে পদ খোয়ালেন পরেশ। সেখানে জেলা থেকে মন্ত্রী করা হল দিনহাটা থেকে উপনির্বাচনে জয়ী উদয়ন গুহকে।
জগদীশ-অনুগামীদের আরও দাবি, উত্তরের রাজনীতির রীতি অনুযায়ী, জেলা থেকে এক জন রাজবংশী সম্প্রদায়ের মন্ত্রীকে সরিয়ে আর এক জন ওই সম্প্রদায়ের বিধায়ককে সুযোগ দেওয়াই স্বাভাবিক ছিল। তবে জেলা তৃণমূল নেতাদের একাংশ অবশ্য দাবি করেছেন, পরেশের জায়গায় হেমতাবাদের বিধায়ক সত্যজিৎ বর্মণকে মন্ত্রী করা হয়েছে। তিনিও রাজবংশী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জগদীশের এক অনুগামী বলেন, “যে কোনও দিক থেকে বিচার করলে, জগদীশ বসুনিয়া এগিয়ে থাকবেন। অথচ, দলের কাছে দাদা উপেক্ষিত। তাঁকে সুযোগ দেওয়া হল না।” এ বিষয়ে না ঢুকে তৃণমূলের কোচবিহার জেলার চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ বলেছেন, “দল যা দায়িত্ব দেবে, তা আমরা সবাই মেনে চলব।”