Ananta Maharaj

Ananta Maharaj: মানুষের পাশে কে, মানুষই বা কার পাশে

খুব বেশি আগেকার কথা নয়। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকে রাজ্য ভাগের আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত হতে শুরু করে কোচবিহার। উত্তরবঙ্গের একাংশও।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২২ ০৬:১২
Share:

ফাইল চিত্র।

“মানুষই আমার কাছে সব। আমি তো তাঁদের কথাই তুলে ধরি।” রাজবংশী জনগোষ্ঠীর কথা বলতে গিয়ে বারে বারে মানুষের কথাই বলছিলেন অনন্ত মহারাজ। কিন্তু সেই মানুষের সকলের মধ্যেই কি মহারাজের সমান প্রভাব রয়েছে?

Advertisement

খুব বেশি আগেকার কথা নয়। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকে রাজ্য ভাগের আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত হতে শুরু করে কোচবিহার। উত্তরবঙ্গের একাংশও। জীবন সিংহ আলাদা রাজ্যের দাবিতে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) গড়ে জঙ্গি আন্দোলন শুরু করেন। কেপিপি নেতা অতুল রায়, নিখিল রায়রা কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন শুরু করেন। অন্য দিকে, গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন (জিসিপিএ) গড়ে কোচবিহারের ভারতভুক্তি চুক্তি রূপায়ণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন অনন্ত রায় (মহারাজ), বংশীবদন বর্মণরা। তখন অনন্ত অন্তরালেই ছিলেন। সামনের সারিতে ছিলেন বংশীবদন।

সেই জীবন সিংহ কিছু দিন আগে একটি ভিডিয়ো বার্তায় অনন্ত মহারাজের পক্ষ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। মহারাজ অবশ্য জীবনের কথা উঠলেই রেগে যান। তিনি স্পষ্টতই জানিয়ে দেন, তাঁর আন্দোলন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, অহিংসার পথে। আবার একসময় যে বংশীবদনের সঙ্গে এক মঞ্চে থেকে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন মহারাজ, তাঁর সঙ্গেও এখন সম্পর্ক নেই। বলা চলে, দু’জন দুই মেরুতে। শুধু তাই নয়, জিসিপিএ একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি অংশের কয়েক জন গ্রেটার কোচবিহার ডেমোক্রেটিক পার্টি গড়ে তোলেন। এক কথায়, গ্রেটার সংগঠন কয়েক টুকরো হয়ে যায়। আপাতত অবশ্য গ্রেটার দুটি সংগঠনই শক্তিশালী হিসেবে রয়েছে। একটি অনন্ত মহারাজের, অন্যটি বংশীবদন বর্মণের।

Advertisement

মহারাজের অনুগামীরা দাবি করেন, বংশীবদনকে জেল থেকে ছাড়াতে উদ্যোগী হয়েছিলেন মহারাজই। মহারাজ নিজেও সেই গল্প শুনিয়েছিলেন একান্ত সাক্ষাৎকারে। সে কথা কিন্তু মানতে নারাজ বংশী বা তাঁর অনুগামীরা। তাঁদের দাবি, বংশীর জেলমুক্তির সময় উল্টে বিরোধিতা করেছিলেন মহারাজ। তাঁদের অভিযোগ, মহারাজের এক অনুগামী অনশনে বসে দাবি করেছিলেন, শুধু বংশীবদন একা কেন মুক্তি পাবেন? সব জেলবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে।

বংশী অনুগামীরা আরও দাবি করেন, কোচবিহারের ভারতভুক্তি চুক্তি নিয়ে সামনে থেকে আন্দোলন করেছিলেন একমাত্র বংশীবদন। সেই সময় কোথাও মহারাজকে দেখা যায়নি। আন্দোলনের জন্য গ্রেফতার হয়েছিলেন বংশী। প্রায় সাত বছর তিনি জেলবন্দি ছিলেন। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকারে আসার পরে বংশীবদন মুক্তি পান। তাই রাজবংশী মানুষ বংশীর উপরেই আস্থা রাখেন বলে তাঁদের দাবি। বংশীবদন নিজে বলেন, “জেল থেকে বেরিয়েও জাতি-মাটির জন্য আন্দোলন থেকে সরিনি। বাকি কে কি করেছেন, মানুষ দেখেছেন।’’

এখানেই খেদ অনন্তের। তিনি জানান, পুরো সময়টাই পিছনে থেকে তিনি আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন। বংশীকে যাতে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে না হয়, সে জন্য আলোচনাও চালিয়েছেন পিছনে থেকেই। তিনি নিজেকে কার্যত নেপথ্য শিল্পী বলেই প্রতিপন্ন করতে চান। মানুষের মধ্যে তাঁর প্রভাব রয়েছে— এ কথাও স্পষ্ট করে বলেন না। শুধু উল্লেখ করে যান— তাঁকে যখন রাজ্য সরকারের ‘রোষে’ পড়তে হয়েছিল, ভিটে ছেড়ে চল যেতে হয়েছিল, তখন কোচবিহারের মানুষও রেগে গিয়েছিলেন। কেন? তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা আমাকে ভালবাসেন।’’

বর্তমান শাসকদল তৃণমূলের কোচবিহার জেলা নেতৃত্ব অবশ্য অনন্তের প্রভাবের কথা মানতে চান না। দলের জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পাশে রয়েছেন।’’ (চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement