প্রতীকী চিত্র।
ডিজ়েলের দাম বেড়েছে। ফলে পণ্য পরিবহণের খরচ বেড়েছে বহু গুণ। বিশেষ করে যে পণ্য ভিন্ রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসে। শুধু কি তার ফলেই স্কুল পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের প্রাপ্য তালিকা থেকে বাদ গেল সয়াবিন, বদলে যোগ হল বাড়তি আলু? নাকি এর সঙ্গে দোসর নতুন কৃষি আইনও?
অগস্ট মাসে মিড ডে মিলের যে তালিকা এসেছে স্কুলে স্কুলে, সেখানে দেখা গিয়েছে, ১০০ গ্রাম সয়াবিন বাদ দিয়ে তার বদলে যোগ হয়েছে এক কেজি বাড়তি আলু। অনেকেরই বক্তব্য, করোনা কালে যাতে পড়ুয়ারা পুষ্টিকর খাদ্য পায়, তার পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলি। তা হলে সয়াবিনের বদলে বাড়তি আলুতে পুষ্টিগুণে ঘাটতি হবে না? সরকারি কর্তাদের একাংশও মানছে, কিছুটা হলেও ঘাটতি হবে। তবে তাঁদের দাবি, সয়াবিনের দাম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে এই সিদ্ধান্ত না নিলে আলু, চিনি বা ডাল বিলি করা যেত না।
বাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দেড় মাসে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় সয়াবিনের দাম গড়পরতা কেজি প্রতি ৭০ টাকা থেকে বেড়ে কোথাও ১০০ টাকা, কোথাও বা ১২৫ টাকায় পৌঁছেছে। মালদহ-বালুরঘাটে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে সয়াবিনের দাম। জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়িতে ১০০ পেরোনার মুখে। কেন?
ব্যবসায়ীদের দাবি, দাম বৃদ্ধির মূল কারণ দু’টি। প্রথমত, গত দেড় মাসে জ্বালানি তথা ডিজ়েলের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। সয়াবিনের বেশিরভাগটাই আসে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ থেকে। ডিজ়েলের দাম বৃদ্ধি সরাসরি আঘাত করেছে সাধারণ মধ্যবিত্তের পুষ্টি জোগান দেওয়া এই খাদ্যশস্যের ওপরে। ফোসিনের সদস্য রানা গোস্বামীর কথায়, “সয়াবিনের মূল্যবৃদ্ধির উপরে সরাসরি প্রভাব রয়েছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির। যে ভাবে ডিজ়েলের দাম বেড়েছে, সেই হারে সয়াবিনেরও দাম বেড়েছে।”
দ্বিতীয়ত, নতুন কৃষি আইনের ইচ্ছেমতো মজুতের অনুমতিকেও মূল্যবৃদ্ধির কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। বাণিজ্যমহলের কথায়, গুজরাতের একটি সংস্থা সয়াবিন তেলের বড় উৎপাদক। তারা খোলাবাজার থেকে বেশিরভাগ সয়াবিন কিনে মজুত করছে বলে একটি মহলের দাবি। তারা এশিয়ার বাজার ধরতে ৩৬ শতাংশ বেশি তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। সয়াবিনের গুড়ো অর্থাৎ কাঁচামাল বিদেশ থেকে গুজরাতের বন্দরে এসে পৌঁছয়, যার বেশিরভাগটাই ওই সংস্থার দখলে চলে যায় বলে দাবি। সয়াবিনের পাইকারি বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ কায়েমের চেষ্টা খোলা বাজারে জোগান কমিয়েছে বলেই বাণিজ্যমহলের দাবি। তার জেরে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, দাবি পাইকারি বাজারের। এর নিয়ন্ত্রণ কী ভাবে সম্ভব, তা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।