ছবি: সংগৃহীত
তিনি আর সভাপতি থাকছেন না শুনে সভা শেষ হওয়ার আগেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন সৌরভ চক্রবর্তী। কানে মোবাইল। বাইরে অপেক্ষমাণ ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিকে বললেন, একটু পরেই ফিরছি। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির পূর্ত দফতরে বাংলোতে সৌরভকে রাত পর্যন্ত ফিরতে দেখা যায়নি। সৌরভের কিছু পরেই ঘর থেকে বের হলেন কৃষ্ণকুমার (কিষাণ) কল্যাণী। তাঁকেই নতুন জেলা সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁকে দেখেই বাইরের ভিড় স্লোগান তুলল। মিছিলের মতো ভিড় এগোলো তাঁর সঙ্গে।
মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি জেলার পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস জেলা কমিটির সকলকে ডেকে কিষাণবাবুকে জেলা সভাপতি ঘোষণা করেছেন। তিন বিধায়ক খগেশ্বর রায়, মিতালি রায় এবং বুলুচিক বরাইককে কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে। চন্দন ভৌমিক এবং যুথিকা রায়বসুনিয়াকে জেলা সম্পাদক ঘোষণা করে অরূপ বলেছেন, “জেলা সভাপতি সকলের সঙ্গে কথা বলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গড়ে দেবেন। ব্লক সহ বাকি কমিটি প্রয়োজন মতো পরিবর্ধন, পরিমার্জন করে নেবেন।”
জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং আলিপুরদুয়ার তিন জেলার সমন্বয়ের জন্য একটি কোর কমিটি গড়ে তার চেয়ারম্যান করা হয়েছে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবকে। সেই কোর কমিটিতে জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার দুই জেলার সরিয়ে দেওয়া সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী এবং মোহন শর্মাকে সহ সভাপতি করা হয়েছে অরূপের মন্তব্য, “দু’জনেরই দায়িত্ব বাড়ল।”
লোকসভা ভোটে হারের পরে কিসানবাবু সহ দলের কর্মীদের বড় অংশ দলের জলপাইগুড়ি জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। জেলা নেতৃত্ব জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগেই কি সৌরভকে সরতে হল?
জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসের মন্তব্য, “অনেকগুলি কারণ রয়েছে। সকলকে নিয়ে দল যাতে কাজ করে তাই এই রদবদল।’’
জলপাইগুড়ির যে কমিটি এ দিন ঘোষণা হয়েছে, তাতে সকলেই দলের পুরোনো দিনের নেতা-নেত্রী। লোকসভা ভোটে হারের পর জেলা নেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দেগে কিষাণবাবু মন্তব্য করেছেন, জলপাইগুড়িতে “তোলা-মূল” কংগ্রেস চলছে। নয়া সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে কিষাণবাবু বললেন, “দলের যে সব নেতা দুর্নীতি, অনিয়মে জড়িত তাঁদের বলব, লোকের সামনে যাবেন না। আপাতত তাঁরা ঘরে বসে থাকুন।”
কিষাণবাবু সভাপতি হওয়ার সঙ্গে দলের জেলা কার্যালয়ও বদলে গুরজংঝোরা ভবনে চলে গেল। রাতে সেই অফিসে অরুপ বিশ্বাস যাওয়ার কথা। অফিসের সামনে শয়ে শয়ে কর্মী-সমর্থক ভিড় করে। ভিড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাজিও পোড়ানো হয়। যা দেখে এক নেতার মন্তব্য, “অনেক দিন পরে দলের এমন জমায়েত দেখলাম।”
নতুন জেলা কমিটি গঠন হলেও অন্য শাখা সংগঠনগুলির মুখ বদলায়নি। নাম ঘোষণা হওয়ার পরে কিষাণ কল্যাণীকে প্রথম বরণ করে নেন জেলা যুব সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়। সৌরভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত সৈকতকে স্লোগানও দিতে দেখা যায়।