আশায় কুয়ারন। নিজস্ব চিত্র
ডোবা ও পুকুর ঘেঁটে তুলে আনা গেঁড়ি ও গুগলি খেয়ে দিন কাটে গ্রামের আদিবাসীদের। বালুরঘাট ব্লকের চকভৃগু পঞ্চায়েতের কুয়ারন গ্রামে অভাব অনটনের নিস্তরঙ্গ জীবনে খুশির ঢেউ বয়ে এনেছে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতে ক্ষমতার বদল। দু’দিন আগে ঘরের ছেলে পিটার বারু চকভৃগু পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে আশায় বুক বেঁধেছেন অসহায় বৃদ্ধা আনে গুড়িয়া, সারা হোড়ে, জোসেফ কিস্কুরা। প্রধানের হাত ধরে কুয়ারন এলাকায় ১০০ দিনের কাজের সুযোগ থেকে রাস্তা, আলো এবং পানীয় জল মিলবে বলে আশায় দিন গুনছেন তাঁরা।
দু’দিন আগে ভোটাভুটিতে বিজেপির কাছ থেকে চকভৃগু পঞ্চায়েতের কর্তৃত্ব দখল করে তৃণমূল। প্রধান নির্বাচত হন কুয়ারন গ্রাম সংসদের তৃণমূল সদস্য পিটার। দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা কুয়ারনে পিটারের উদ্যোগে উন্নয়ন আসবে বলে মনে করেন বাসিন্দারা। জোসেফ কিস্কু, মারিয়ন হোড়ের কথায়, ‘‘এখন জমি ও মাঠঘাটের কাজ নেই। ১০০ দিনের মাটি কাটার কাজ এ বার এলাকায় গুরুত্ব পাবে। সকলের কাজ মিলবে।’’ ঘরের ছেলে পিটার পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছেন বলে আনে গুড়িয়া স্বপ্ন দেখছেন তাঁর বাড়ির সামনে এ বার পানীয় জলের টিউবওয়েল বসবে। পঞ্চায়েতের সহায়ক গৌতম দাশগুপ্ত জানান, আনেদের জলকষ্টের সমস্যা মেটাতে হস্তচালিত নলকূপ বাসানোর সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল। বলাই বাহুল্য তা গত প্রায় এক বছরে বাস্তবায়িত হয়নি।
এ দিন পিটার বলেন, ‘‘এলাকায় পানীয় জল, রাস্তা তৈরি, আলোর ব্যবস্থা আগে করব। ১০০ দিনের কাজের মাস্টাররোল তৈরি হয়ে রয়েছে। বুধবার সরকারি ভাবে প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে ওই কাজ রূপায়ণে উদ্যোী হব।’’
কুয়াশা ঘেরা শীতের ঘোলা দুপুরে আনের বাড়ির পাশে বেহাল মাটির রাস্তা ধরে স্ত্রী সুভাসিনীকে নিয়ে ঘরে ফেরেন ভূমিহীন খেতমজুর অমিত গুড়িয়া। হাতের ডালিতে সংগৃহীত গেঁড়ি-গুগলি। গ্রামে কাজ নেই। তাই সকাল থেকে অন্যদের মতো ওই আদিবাসী দম্পতিকে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া ডোবা ও পুকুরে নেমে গুগলি সংগ্রহ করতে হয়। ঝোপঝাড়ে ঢাকা বাড়িতে বিদ্যুৎ, পানীয় জল ও শৌচাগারহীন অবস্থায় দিন কাটানো আনে ও অমিতের মতো সারা, সাবিস্তিয়ান হোড়েদের পাশে দাঁড়িয়ে পঞ্চায়েত প্রধান পিটার কতটা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন, সে দিকে তাকিয়ে গোটা কুয়ারন।